বিজ্ঞাপন
কিন্তু সাজিদের এই স্বপ্ন যাত্রা হঠাৎই থমকে গেল। গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে ভেসে উঠে তার নিথর দেহ। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। সাজিদ হত্যার তদন্তে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে সিআইডি।
এদিকে তার এই আকস্মিক মৃত্যু যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না তার সহপাঠী ও কাছের বন্ধুরা। বন্ধুরা বলছেন, সাজিদ ছিলেন তাদের আনন্দ-বেদনার সঙ্গী, সাহচর্যের নির্ভরতা। কাটানো অসংখ্য স্মৃতি এখন তাড়া করে ফিরছে সবার মনে। সাজিদের গানের সুর যেন এখনও কানে বাজছে সবার।
ক্যাম্পাসসূত্রে, সাজিদ পড়াশোনার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন। সম্প্রতি কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেছিলেন সাজিদ। ছোলা, ঝালমুড়ি, ভাজাপোড়া— আর শুক্রবারে থাকত বিশেষ আয়োজন পোলাও-মুরগির। কিন্তু নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে সেই স্বপ্ন থেমে গেল চিরদিনের জন্য।
সাজিদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ইনসানুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই আমাদের বিজনেস প্ল্যান ছিলো। আমরা প্রশাসন বরাবর আবেদনও করেছিলাম। আমি জিয়া মোড়ে আলিম ভাইয়ের সাথে ১৫/১৭ দিনের মতো কাজ করি। পরে ছুটিতে বাড়ি চলে যায়। ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে আসার পর জিয়া মোড়ে সাজিদ আর আজহার ছোলা আর ঝালমুড়ি বিক্রি করা শুরু করে। পরে আমি ভাজাপোড়া বিক্রি শুরু করি। আমরা সব কাজ একসঙ্গে করতাম। তবে তাদের আর আমার ক্যাশ আলাদা থাকতো। তবে শুক্রবার দিন সবাই মিলে পোলাও মুরগীর আইটেম রাখতাম। সবাই যৌথভাবে আজহারের রুমে রান্নাবান্না ও প্যাকেট করে একসঙ্গে বিক্রি করতাম।’
সাজিদের আরেক সহপাঠী আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আজহার ইসলাম বলেন, ‘সাজিদের সাথে পরিচয় ২০১৮ সালের দিকে। আমরা আলেম (ইন্টারমিডিয়েটে) একসঙ্গে পড়তাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর একটি মেসে ইনসান, সাজিদ ও আমি একই রুমে থাকতাম। সাজিদসহ আমরা কিছুদিন আগে জিয়া মোড়ে ছোটখাটো বিজনেস শুরু করি। প্রায় দুই সপ্তাহ মতো আমরা একসঙ্গে বিজনেস করেছি। তবে বিভাগের পরীক্ষার প্রিপারেশনের জন্য দোকান কিছুদিন বন্ধ রাখা হয়।’
জিয়া মোড় এলাকার দোকানিরা বলেন, ‘কিছুদিন হলো তারা জিয়া মোড়ে অস্থায়ী দোকান দিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করে। তারা
তিনজন পাশাপাশি ছোলা, ভাজাপোড়া, ঝালমুড়ি ও শুক্রবারের দুপুরের খাবার বিক্রি করতেন। মিলেমিশেই কাজ করতেন তারা।’
সাজিদের দোকানের পাশের দোকানী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম বলেন, ‘তাদের মধ্যে একজন (ইনসান) আগে আমার দোকানে কাজ করতো। পরে সে এখান থেকে গিয়ে আমার পাশেই ঝালমুড়ির ব্যবসা শুরু করে তারা। তার কিছুদিন পর থেকে তারা আবার শুক্রবারে খাবার বিক্রিও শুরু করে। সাজিদ, ইনসান ও আজহার একত্রে এই ব্যবসা করতো। তার আগে সাজিদকে চিনতাম না।’
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...