ছবি- সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
গাজা আবারও রক্তে রঞ্জিত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি আহ্বান এবং হামাসের আংশিক সম্মতির পরও শনিবার (৪ অক্টোবর ২০২৫) ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বোমাবর্ষণে অন্তত ৭০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অনেক।
চিকিৎসা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, কেবল গাজা সিটিতেই শনিবারের হামলায় ৪৫ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। শহরের তুফাহ এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় একই পরিবারের ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছে মাত্র দুই মাস বয়সী এক নবজাতকসহ সাত শিশু। হামলায় আশপাশের বাড়িঘরও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ গাজার তথাকথিত “নিরাপদ এলাকা” আল-মাওয়াসিতেও ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে দুই শিশু নিহত এবং অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এই অঞ্চলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নিতে বলেছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ওই স্থান একাধিকবার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরেও একাধিক বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে। আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, “উত্তরের হাসপাতালগুলো কার্যত ধ্বংসপ্রাপ্ত। জ্বালানির অভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
এই রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির মধ্যেই ট্রাম্প তার Truth Social প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “হামাসকে দ্রুত বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রসর হতে হবে, নতুবা সব চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। এখনই সমাধান চাই—সবার জন্য ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে।”
পরবর্তীতে ট্রাম্প আরও জানান, ইসরায়েল একটি প্রাথমিক “প্রত্যাহার সীমা”তে সম্মতি জানিয়েছে এবং বিষয়টি হামাসকেও জানানো হয়েছে। হামাস সম্মতি দিলেই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং বন্দি বিনিময় শুরু হবে বলে জানান তিনি।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠ দুই উপদেষ্টা—স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার—কে মিশরে পাঠাচ্ছেন পরিকল্পনার কারিগরি দিকগুলো চূড়ান্ত করতে। একইসঙ্গে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরাও সেখানে যোগ দেবেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “হামাসের নিরস্ত্রীকরণই শান্তির পূর্বশর্ত। এটি ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেও থাকবে, নতুবা ইসরায়েল সামরিকভাবেই লক্ষ্য অর্জন করবে।”
অন্যদিকে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণই প্রমাণ করছে যে নেতানিয়াহুর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।” সংগঠনটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আরব ও ইসলামি দেশগুলোর প্রতি গাজার মানুষের সুরক্ষায় অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আদনান হায়াজনেহ মনে করেন, হামাস চাইছে এমন নিশ্চয়তা, যাতে বন্দি মুক্তির পরও তাদের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত না হয়। তার ভাষায়, “এই পরিকল্পনা মূলত হামাসের আত্মসমর্পণের শর্তে সাজানো। তাই তারা বন্দিদের হাতকে সর্বশেষ দরকষাকষির অস্ত্র হিসেবেই ধরে রেখেছে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা তার অন্তত তিনগুণ হতে পারে।
এদিকে গাজার আকাশে এখনও ধোঁয়ার কুণ্ডলী, ধ্বংসস্তূপে খুঁজে ফিরছে স্বজনেরা। ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা এখনো আলোচনায়, কিন্তু গাজাবাসীর কাছে সেটি এখন কেবল এক দূরাশার নাম।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...