ছবি- সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সাধারণ কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সোমবার (৬ অক্টোবর) রিয়াদে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিকে দুই দেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও অভিবাসন ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরব সরকারের পক্ষে মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে এটিই প্রথমবারের মতো সাধারণ কর্মী নিয়োগ বিষয়ক আনুষ্ঠানিক চুক্তি। এর আগে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানো হতো অনানুষ্ঠানিকভাবে। ১৯৭৬ সালে প্রথমবার সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি সেখানে কর্মরত আছেন, যা দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের সবচেয়ে বড় উৎস।
এর আগে, ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগ এবং ২০২২ সালে দক্ষতা যাচাই সংক্রান্ত দুটি বিশেষ চুক্তি সই হয়েছিল। তবে এবারকার চুক্তি সাধারণ কর্মী নিয়োগে প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি প্রবাসী কর্মীদের অধিকার, সুরক্ষা ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিতের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
চুক্তির ফলে এখন থেকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ, আধা-দক্ষ ও সাধারণ শ্রমিক সৌদি আরবে আরও বৃহৎ পরিসরে যেতে পারবেন। উভয় দেশই প্রশিক্ষণ, দক্ষতা যাচাই, নিরাপদ অভিবাসন এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করবে। একই সঙ্গে নিয়োগকর্তা ও কর্মীর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক, আকামা নবায়ন এবং এক্সিট ভিসা প্রদানে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ বাধ্যতামূলক হবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল সৌদি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন যেন কর্মীদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে, আকামা নবায়নের দায়িত্ব নিয়োগকর্তারা যথাযথভাবে পালন করেন এবং দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা দ্রুত এক্সিট ভিসা পান। তিনি বলেন,
“বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী প্রেরণের আগে আমরা প্রশিক্ষণ ও স্কিল সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করব। এর মাধ্যমে সৌদি আরব আরও গুণগত শ্রমশক্তি পাবে।”
প্রত্যুত্তরে সৌদি মানবসম্পদ মন্ত্রী আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী বলেন,
“বাংলাদেশ আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার অংশীদার। এই চুক্তি শুধু নিয়োগ নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।”
তিনি আরও জানান, দুই দেশের মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কর্মী কল্যাণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও আইনি সুরক্ষার বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
এছাড়াও বৈঠকে সৌদি বিনিয়োগে বাংলাদেশে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, ডিজিটাল যাচাইকরণ ব্যবস্থা, নারী কর্মীদের সুরক্ষা এবং অবৈধ দালাল চক্র দমনের জন্য যৌথ মনিটরিং সিস্টেম গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দেলওয়ার হোসেন, মিশন উপপ্রধান এস. এম. নাজমুল হাসান, শ্রম কাউন্সেলর মুহাম্মাদ রেজায়ে রাব্বীসহ দুই দেশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই চুক্তি কার্যকর হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ২৭ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন, যারা প্রতিবছর প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।
নতুন চুক্তির আওতায় কর্মীরা দক্ষতা অনুযায়ী উন্নত বেতন, ভালো কর্মপরিবেশ, চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা পাবেন। একই সঙ্গে নিয়োগ ও কর্মচুক্তির তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি যৌথ অনলাইন ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে, যা স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, এই ঐতিহাসিক চুক্তি শুধু রেমিট্যান্স বাড়াবে না, বরং সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...