বিজ্ঞাপন
অভিযোগ রয়েছে, তারা দুজন যোগসাজশ করে ৫২১টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত প্রকল্পের বিপুল অঙ্কের বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন।
স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ— মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের জন্য সরকার প্রদত্ত সব ধরনের বরাদ্দ, বীজ, সার ও ওষুধ তাদের কাছে না পৌঁছে অফিসে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও আলোচনার ঝড় উঠেছে।
এদিকে, বরাদ্দ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কৃষি অফিসার মোঃ বাহাউদ্দিন সেক সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে ভোলা জেলার খামারবাড়িতে অতিরিক্ত উপ-পরিচালক পদে পদায়ন পেয়েছেন। তবে চলতি অর্থবছরে প্রণোদনা কার্যক্রম চলমান থাকায় তিনি এখনো নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি বলে জানা গেছে।
মুকসুদপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ কৃষকরা জানিয়েছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ২৫০ জন কৃষকের মধ্যে পুষ্টি বাগান প্রকল্পের আওতায় বীজ, সার ও কীটনাশক বিতরণ করা হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোনো ধরনের উপকরণ দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, “আমরা অশিক্ষিত কৃষক মানুষ। একবার ট্রেনিং, সার ও ওষুধ দিয়ে পাঁচবার সই নিয়েছে মুকসুদপুর কৃষি অফিস। এখন শুনছি ৫২১টা পুষ্টি বাগানের বরাদ্দ ছিলো, কিন্তু কিছুই পাইনি। আমাদের হক মেরে খেয়েছে ওরা—আমরা বিচার চাই।”
প্রকল্প পরিচালক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মুকসুদপুর উপজেলায় ৫২১টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসব বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য আরও ১০ লাখ ৪২ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে।
মুকসুদপুর উপজেলা কৃষি অফিসের একটি গোপন সূত্র জানায়, প্রথম অর্থবছরে বাস্তবে প্রায় ২৫০টি বাগান স্থাপন করা হয়। বাকি ২৭১টি বাগানের বরাদ্দ দুই মামাতো ভাই ও স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়।
পরের বছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পুরো বরাদ্দই তারা আত্মসাৎ করে ভুয়া বিল-ভাউচার ও মাস্টাররোল তৈরি করে অফিসে সংরক্ষণ করেন। পরে অডিট অফিসারদের অর্থ দিয়ে সব কিছু “নিয়ম অনুযায়ী সম্পন্ন” দেখানো হয়।
জানা গেছে, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বশির আহমেদ মোল্যা দীর্ঘ এক যুগ ধরে মুকসুদপুর উপজেলায় কর্মরত। তিনি স্থানীয় রাজনীতিকদের সহযোগিতায় ২০২২ সালে তার আপন ফুফাতো ভাই বাহাউদ্দিন সেককে কৃষি অফিসার হিসেবে ওই উপজেলায় পোস্টিং করিয়ে আনেন। এরপর থেকেই দুই ভাই মিলে নানা প্রকল্পে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের কার্যক্রম চালাতে থাকেন।
অফিসের একটি সূত্র জানায়, তথ্য ফাঁস ঠেকাতে বশির আহমেদ মোল্যাকে পশারগাতী ইউনিয়ন থেকে ডেভেলপমেন্ট সেকশনে ফাইল ও হিসাব বিভাগের দায়িত্ব দেন বাহাউদ্দিন সেক, যাতে প্রকল্পের কাগজপত্র নিজেরাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
অভিযুক্ত উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ বাহাউদ্দিন সেক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “যা কিছু করা হয়েছে, সব কিছু নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।”
তবে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বশির আহমেদ মোল্যার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মুকসুদপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, “আমি মাত্র দুই মাস হলো অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়েছি। পূর্বের কার্যক্রম সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। তবে কৃষকদের বরাদ্দ আত্মসাতের ঘটনার সত্যতা পেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা দ্রুত উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, যাতে সরকারি অর্থ আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কৃষকদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করা যায়।
প্রতিবেদক- কে এম সাইফুর রহমান, গোপালগঞ্জ।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...