হারিকেন মেলিসার আঘাতে জ্যামাইকার একটি বিধ্বস্ত এলাকা, যেখানে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে এবং চারপাশে ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে আছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জ্যামাইকা।
মৌসুমের অন্যতম শক্তিশালী ঝড় আটলান্টিক হারিকেন মৌসুম সাধারণত ১ জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। মৌসুমের শেষার্ধে এসেও 'মেলিসা' ক্যাটাগরি-৫ ঝড়ে রূপ নেয়, যা এটিকে এই মৌসুমের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করেছে। এর আগে সেপ্টেম্বরে হারিকেন 'অটো' বাহামাসে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছিল।
ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি গতির বাতাস নিয়ে আঘাত হানা মেলিসার তাণ্ডবে জ্যামাইকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটিতে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস পরিস্থিতিকে বিপর্যয়কর উল্লেখ করে জানান, "পুরো দেশটাই যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।"
প্রধানমন্ত্রী হোলনেস আরও বলেন, "দেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাসপাতাল, লাইব্রেরি, পুলিশ স্টেশন, বন্দরঘরসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনা।" দেশটির স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, তিনজন পুরুষ ও এক নারী বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছিলেন, পরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
মন্টেগো বে শহরের মেয়র রিচার্ড ভারনন বলেন, "শহরের অর্ধেকটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য— সবাই বেঁচে আছে কি না তা নিশ্চিত করা।" কিংস্টনের এক ব্যবসায়ী গর্ডন সোয়াবি জানান, সমুদ্রের ধারে তার কাজিনের স্বপ্নের বাড়িটি সম্পূর্ণ ধসে গেছে।
মেলিসার প্রভাবে হাইতিতে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে আরও অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মর্মান্তিক বিষয় হলো, নিহতদের মধ্যে ১০ জনই শিশু। আকস্মিক বন্যায় দেশটিতে প্রায় ৩ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। খ্রিস্টান সংগঠন ওয়ার্ল্ড রিলিফ-এর কর্মকর্তা পাসকাল বিমেনিইয়ামানা বলেন, "অনেক বাড়ি উপকূলে ভেসে গেছে, বহু মানুষ খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন।"
জ্যামাইকার পর মেলিসা কিছুটা দুর্বল হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হয় এবং কিউবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। ঝড়ে সেখানেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াস–কানেল জানিয়েছেন, দেশটি 'সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির' জন্য আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিল, যা ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমাতে সাহায্য করেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে জ্যামাইকায় সহায়তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হাইতি ও বাহামাসও আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে।
মেলিসা বর্তমানে দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–১ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও, এটি এখনো তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যার পর ঝড়টি বাহামাসের দিকে অগ্রসর হয়েছে, যেখানে বিপজ্জনক জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরপর এটি আরও উত্তরে বারমুডা হয়ে শুক্রবার রাতে কানাডার সেন্ট জনস শহরের কাছে গিয়ে একটি প্রবল এক্সট্রা-ট্রপিকাল সাইক্লোনে পরিণত হবে বলে আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...