বিজ্ঞাপন
জামায়াতে ইসলামী সূত্রে জানা গেছে, দলটি তিনটি মূল দাবির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে যুগপৎ আন্দোলনরত সঙ্গীদের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে—আইনি ভিত্তির মাধ্যমে জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে জরুরি আদেশ জারি করা এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের স্পষ্ট দলীয় অবস্থান ঘোষণা করা।
গত ৩ নভেম্বর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও রাজনৈতিক দলের মধ্যে সরাসরি আলোচনার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে সরকারকে চাপে রাখার নীতির ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ সঙ্গীদের নিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
পাঁচ দফা গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনরত আটটি রাজনৈতিক দল ১১ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুর ২টায় ঐতিহাসিক পল্টন মোড়ে জনসভা আয়োজন করবে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হবে।
গত ৬ নভেম্বর স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেওয়ার কর্মসূচি উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “আজ স্মারকলিপি দেওয়ার পরও যদি দাবি মানা না হয়, তাহলে ১১ নভেম্বর চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি কার্যকর হবে। ঢাকা মহানগরী জনতার নগরী হবে। লড়াই হবে।”
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, “আলোচনার পথ খোলা। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানানোর আগেই জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আলোচনা আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে যেমন আলাপ-আলোচনার দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে, তেমনি সরকারের প্রতি রেফারির ভূমিকায় দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।”
জামায়াতের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে রয়েছেন—নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ। কমিটি নির্বাচনী কাঠামো, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট বিষয়ে একটি ‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “সরকারের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। কিন্তু আমরা দেখছি ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের বেশকিছু বিষয়ে সরকারের গড়িমসি ও বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট। তাই ১১ নভেম্বর ঢাকায় আটটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জনসভা আহ্বান করা হয়েছে। এখানে নতুন ও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
রোববার (৯ নভেম্বর) জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১১ নভেম্বরের জনসভা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন ও দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আবদুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকির, সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও ইয়াছিন আরাফাত, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।
জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য বলেন, “পল্টনের কর্মসূচি মূলত সরকারকে চাপে রাখার উদ্দেশ্যে। সরকার যেন বিএনপির কোলে চলে না যায়, তাই ১১ নভেম্বরের কর্মসূচি জনসভা হলেও মহাসমাবেশ হিসেবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, “সরকার আমাদেরকে রাজনৈতিক ময়দানে ছেড়ে দিয়ে আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে, এটি দ্বিচারিতা। ১১ নভেম্বরের জনসভা থেকে আমরা সরকারের প্রতি বার্তা দিতে চাই—গণভোটের আয়োজন ও এর ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে হবে।”
খেলাফত মজলিশ মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আলাপ-আলোচনার আহ্বান রয়েছে, কিন্তু আমরা সাড়া দেখছি না। তাই আমাদের যুগপৎ সঙ্গীরা মিলে জনসভা কর্মসূচি নিয়েছে। এখানে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান থাকবে—কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।”
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...