আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেই লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ এবং বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনার জন্য দলটিকে দায়ী করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “সরকার তাদের মদদপুষ্ট সাম্প্রদায়িক শক্তিকে এগুলো করাচ্ছে, যাতে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়।”
ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দুইজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করবে। ট্রাইব্যুনাল গত ২৩ অক্টোবর এই তারিখ ঘোষণা করেছিল। এরপর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বিদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এবং দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলছেন, তারা “ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ভুয়া রায় দেওয়ার চেষ্টা রুখতে” এই কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছেন।
ঢাকা পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, গত এগারো দিনে রাজধানীর পনেরটি স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ এবং গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, “১৩ নভেম্বর নিয়ে কোনো ধরনের আশঙ্কার কারণ নেই। ঢাকার মানুষ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আমরা সবাই মিলে এটি রুখে দেবো। ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, “আওয়ামী লীগ তাদের নেত্রীর মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। এতে তাদের খুব বেশি সুবিধা হবে না। তবে রাজনৈতিক সমাধান না হলে বারবার এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা পুলিশ একা মোকাবেলা করতে পারবে না।”
গত মে মাসে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও, ছাত্রলীগকে গত নভেম্বরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে দলটির সভানেত্রী ভার্চুয়াল বক্তৃতা এবং মাঝে মাঝে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে দলকে সক্রিয় রাখছেন।
তবে এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখের পর, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে দলটি। দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্যের ভিডিও বার্তায় ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিক্ষোভ এবং ১৩ নভেম্বর ঢাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সরকার এবং বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। ঢাকা এবং অন্যান্য স্থানে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ এবং বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটি ১৩ নভেম্বরের আগে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ও তাদের সহযোগীরা আত্মগোপনে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তবে ১৩ নভেম্বর নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের সভানেত্রী নিজেই তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতারাও কর্মসূচি সফল করার জন্য কাজ করছেন। দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, “দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ কর্মসূচি সফল করবে। ঢাকাকে পুরো বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।”
অন্যদিকে সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করা হবে।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দুদিন ধরে যা হচ্ছে তাতে মানুষের আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। রায় হলে আওয়ামী লীগ ব্যাকফুটে যাবে। তবে আতঙ্ক তৈরি করা ঠেকানো কঠিন। পুলিশ দিয়ে একা সমাধান সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আনতে হবে।”
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...