বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর যে গোষ্ঠী চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের ওপর চেপে বসেছে, তারা এখনো ক্ষমতার নানা কৌশল সাজাচ্ছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে জনগণ ক্ষমা করবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) খুলনা মহানগরীর শিববাড়ী বাবরী চত্বরে জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব অভিযোগ তোলেন ডা. শফিকুর রহমান। সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম।
জামায়াতের আমির বলেন, “কোনো দেশপ্রেমিক দল কখনো চাঁদাবাজ হয়ে আবির্ভূত হয় না। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কিছু গোষ্ঠী দায় ও দরদ দেখানোর বদলে জনগণের ওপর চেপে বসেছে। শহীদদের রক্তের প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা। দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে তরুণেরা, মায়েরা, বিপ্লবী জনগণ কাউকেই ক্ষমা করবে না।”
তিনি অভিযোগ করেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু ব্যক্তি ও দল ছলে-বলে কৌশলে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
“বিভিন্ন জায়গায় বসে ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে। কেউ কেউ বলে—জনগণ ভোট দিক আর না দিক, ক্ষমতায় যেতে হবেই। বন্ধুগণ, বেলা শেষ। বাংলাদেশে এটা হবে না,”—যোগ করেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “দিশেহারা হয়ে, হতাশ হয়ে কেউ যদি চোরা গলি বেছে নেন—তাহলে প্রয়োজনে আরেকটি ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। যে ৫ আগস্ট সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, প্রয়োজন হলে আবারও রুখে দেবে।”
তিনি অভিযোগ তোলেন যে ৫ আগস্টের বিপ্লবের পরপরই একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। “চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে বিনিয়োগকারী থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী—কেউ শান্তিতে নেই। সবাই বলছেন, আগেও ভালো ছিলাম না, এখন আরও খারাপ।”
সংবিধান ইস্যুতে তিনি বলেন, “কেউ কেউ ৭২-এর সংবিধান নিয়ে পড়ে আছেন। মনে রাখবেন, প্রথম দুঃশাসনের পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ওই সংবিধানকে আমূল পরিবর্তন করেছিলেন। আজ যিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন—বেগম খালেদা জিয়াও কখনো ৭২-এর সংবিধানের পক্ষে কথা বলেননি। যারা এ দুজনকে ভালোবাসেন তারা ভুলেও ওই ফ্যাসিবাদি সংবিধানের কথা বলবেন না।”
সমাবেশে তিনি অভিযোগ করেন, “আমাদের ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু জনগণ আর গাছের পোস্টার দেখে সিদ্ধান্ত নেয় না। তারা যাকে ভালোবেসেছে, তাকে বুকের ভেতরে স্থায়ী পোস্টার হিসেবে স্থাপন করেছে। বাহিরের পোস্টার ছিঁড়তে পারবে, বুকে ঠাঁই পাওয়া পোস্টার ছিঁড়তে পারবে না।”
৩৫ বছরের নিচের তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমাদের জীবনে তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারোনি। তোমাদের ভোট চুরি অথবা হাইজ্যাক হতে আমরা দেব না। তোমাদের ভোটের পাহারাদার হয়ে আমরাও তোমাদের সঙ্গে লড়াই করবো।”
তিনি আরও জানান, “আমরা ৮ দলের নয়—১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। আমরা মজলুমের বিজয় চাই, কুরআনের বিধানের বিজয় চাই। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
জামায়াতের আমির বলেন, “দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, সবার জন্য ন্যায়বিচার এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। যুবসমাজের আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ তরুণদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন।”
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— মাওলানা মামুনুল হক (আমির, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস), মুফতি মুসা বিন ইজহার (মহাসচিব, নেজামে ইসলাম পার্টি), মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী (মহাসচিব, খেলাফত আন্দোলন), রাশেদ প্রধান (সহ-সভাপতি, জাগপা), অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন (চেয়ারম্যান, বিডিপি) এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...