Logo Logo
টেকনলজি

মাদারবোর্ড কি সত্যিই ধোয়া যায়? শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সত্য!


Splash Image

ছবি : সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, কেউ পুরনো কম্পিউটারের মাদারবোর্ড খুলে পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন


অনেকেই এমন ভিডিও দেখে হাসছেন, অনেকে আবার তা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের কম্পিউটার নিয়ে একই কাজ করার চিন্তা করছেন। আবার কেউ কেউ এমনটা করার কথা ভাবছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মাদারবোর্ড কি সত্যিই ধোয়া যায়? আর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো কি আদতে কোনো কাজের কথা? চলুন জেনে নিই আসল সত্যটা।

মাদারবোর্ড কম্পিউটারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটিই হল সেই কেন্দ্রীয় সার্কিট বোর্ড যেখানে প্রসেসর, র‍্যাম, স্টোরেজ, পাওয়ার কানেকশনসহ অসংখ্য ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক উপাদান সংযুক্ত থাকে। এগুলোর প্রত্যেকটিই অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং পানির সংস্পর্শে এলেই শর্টসার্কিট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে যদি সেই পানি শ্যাম্পু মেশানো হয়, তাহলে ক্ষতির মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে।

তাহলে প্রশ্ন আসে—কেন কেউ একজন মাদারবোর্ড ধোয়ার মতো কাজ করেন? আসলে, কিছু টেকনিশিয়ান ও ই-ওয়েস্ট রিসাইক্লিং কর্মীরা পুরনো ও নোংরা সার্কিট বোর্ড পরিষ্কারের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃদু ডিটারজেন্ট বা ডিস্টিলড ওয়াটার ব্যবহার করে থাকেন, তবে সেটা অত্যন্ত অভিজ্ঞতার সাথে এবং ধোয়ার পরে দীর্ঘ সময় ধরে শুকানোর পরই করা হয়। কিন্তু তারা কখনোই সুগন্ধিযুক্ত চুল ধোয়ার শ্যাম্পু ব্যবহার করেন না। কারণ শ্যাম্পুতে থাকে তেল জাতীয় উপাদান, ফ্র্যাগরেন্স কেমিক্যাল এবং সারফ্যাকট্যান্ট, যা সার্কিটে জমে থেকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।

বেশিরভাগ ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, মাদারবোর্ড ধোয়ার পর সেটি চালু করে দেখানো হয় যে, এটি কাজ করছে। কিন্তু ক্যামেরার পেছনের গল্পটি কেউ দেখায় না। অনেক সময় এমন বোর্ড কিছুদিনের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে, কারণ ভেতরে জমে থাকা আর্দ্রতা ধীরে ধীরে সার্কিটের ক্ষতি করে। এমনকি সম্পূর্ণ শুকানোর পরেও কিছু রাসায়নিক উপাদান থেকে যায়, যা ধীরে ধীরে অক্সিডেশন ঘটিয়ে সার্কিট পুড়িয়ে দেয়।

তবে মাদারবোর্ড পরিষ্কারের প্রয়োজন যদি হয়েই থাকে, তাহলে সেটি করার জন্য কিছু নিরাপদ উপায় রয়েছে। প্রথমত, আপনি একটি সফট ব্রাশ ব্যবহার করে ধুলো পরিষ্কার করতে পারেন। কম্প্রেসড এয়ার ব্যবহার করেও আপনি বোর্ডটি পরিষ্কার করতে পারেন। কিছু অভিজ্ঞ ব্যবহারকারী ৯০% বা তার বেশি আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করে থাকেন, যা দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ সৃষ্টি করে না। তবে এই কাজটি করতে হবে খুব সাবধানে, এবং বোর্ডটি অবশ্যই ভালোভাবে শুকানো প্রয়োজন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আপনি যদি একজন সাধারণ ব্যবহারকারী হন, তাহলে কখনোই নিজের মাদারবোর্ডে শ্যাম্পু বা কোনো ধরনের তরল লাগাবেন না। এটি একদমই বোকামি এবং এর ফলে আপনার কম্পিউটার চিরতরে অকেজো হয়ে যেতে পারে।

এই লেখার উদ্দেশ্য মজার কোনো ট্রেন্ডকে ছোট করা নয়, বরং সচেতনতা তৈরি করা। প্রযুক্তিকে ভালোবাসলে তার যত্ন নিতেও শিখতে হবে। ভাইরাল ভিডিও দেখে ভুল পথে হাঁটলে নিজের ক্ষতি নিজেরই। তাই টেকনোলজির ক্ষেত্রে সবসময় ভেবে-চিন্তে, তথ্য যাচাই করে পদক্ষেপ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

শেষ কথা, কম্পিউটার হলো একটি সংবেদনশীল ডিভাইস। একে গোসল করিয়ে পরিষ্কার করতে গেলে আপনি তাকে মেরামত করছেন না, বরং তার 'আত্মহত্যার রাস্তাটাই' সহজ করে দিচ্ছেন। তাই প্রযুক্তিকে ভালোবাসুন, তবে তাকে সাবধানে এবং সঠিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা করুন।

আরও পড়ুন

২০২৬ বিশ্বকাপের আগে বড় পরিবর্তন, পাল্টে যাচ্ছে পেনাল্টির নিয়ম!
২০২৬ বিশ্বকাপের আগে বড় পরিবর্তন, পাল্টে যাচ্ছে পেনাল্টির নিয়ম!
চোখের জল মুছতে মুছতে ছেলে হত্যার বিচার চান আসিফের মা
চোখের জল মুছতে মুছতে ছেলে হত্যার বিচার চান আসিফের মা