শায়খ আহমাদুল্লাহ, ছবি- সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
নবী করিম (সা.)-এর মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় গমন শুধু একটি ভৌগোলিক স্থান পরিবর্তন নয়; এটি ছিল দাওয়াত, আদর্শ ও ঈমান রক্ষার সংগ্রামের এক যুগান্তকারী অধ্যায়।
এই হিজরত ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বজন, সম্পদ ও চেনা পরিবেশকে পেছনে ফেলে একটি অজানা পথে যাত্রা। এই পথে হাঁটতে দেখা গেছে ইবরাহিম (আ.)-কে, যিনি ইরাক ত্যাগ করে আল্লাহর নির্দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন ফিলিস্তিন ও মিশরে। ইউসুফ (আ.)-এর কারাবরণ কিংবা আসহাবে কাহাফের আত্মগোপন—সবই হিজরতের চেতনার অন্তর্গত আত্মত্যাগের অনন্য নজির।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, সাহাবিগণ মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাবিধূর মুহূর্ত—হিজরতকেই ইসলামী পঞ্জিকার সূচনা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। যেখানে পৃথিবীর অনেক জাতি তাদের আনন্দঘন দিন বা বিজয় উৎসবকে বছরের সূচনায় রেখেছে, সেখানে সাহাবারা বেছে নিয়েছেন বেদনার সেই গৌরবময় অধ্যায়কে। কারণ, সেই ত্যাগের মাধ্যমেই মুসলিম উত্থানের ভিত রচিত হয়েছিল।
হিজরতের শিক্ষাটি তাই শুধু অতীতের একটি ঘটনা নয়—এটি আজকের ও আগামীর পৃথিবীর জন্যও এক অমূল্য শিক্ষা। আজকের বৈশ্বিক সংকট, মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নৈতিক দোলাচলের সময়ে মুসলমানদের জন্য হিজরতের চেতনা হতে পারে ধৈর্য, স্থিতিশীলতা ও আত্মত্যাগের শক্তিশালী ভিত্তি।
দুঃখজনকভাবে আজ আমরা অনেকেই সেই চেতনা থেকে দূরে সরে গেছি। একটু পার্থিব লাভের আশায় অনেক সময় ঈমান ও নৈতিকতার প্রশ্নে আপস করে ফেলি। অথচ হিজরত আমাদের শিখায়—প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে ঈমান রক্ষার জন্য অনুকূল পরিবেশ খুঁজে নেওয়াই প্রকৃত সফলতা। এই ত্যাগ কেবল আখিরাতের মুক্তির পথ নয়, বরং দুনিয়ার সফলতার জন্যও একটি অপরিহার্য নীতিবোধ।
আসন্ন সময় অনেক বেশি সংগ্রামী। অস্থির এই বিশ্ব পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হলে, হিজরতের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করা জরুরি। কারণ, তা-ই পারে আমাদের শক্তিশালী মনোবল ও স্থির নেতৃত্ব দিতে।
লেখক: শায়খ আহমাদুল্লাহ – ইসলামী চিন্তাবিদ, চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন।
-এমএসকে