ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১৪ জুলাই) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।
গত কয়েক মাসে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একাধিক দফায় আলোচনা ও দরকষাকষি হয়েছে। তবে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েলের আকস্মিক বিমান হামলা এবং এর জবাবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ওই আলোচনায় ভাটা পড়ে। টানা ১২ দিন ধরে চলা এই সংঘাতের পর উভয় পক্ষ ফের আলোচনায় ফিরতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেও এবার আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে তেহরান।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি বেলায়েতি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের শর্তে কোনো আলোচনায় ইরান অংশ নেবে না। তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার থেকে ইরান সরে আসবে না।”
এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনার কোনো দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকের স্থান, তারিখ বা সময় এখনো নির্ধারণ হয়নি।”
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পাঁচ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও সেগুলোর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে পরমাণু চুক্তি (জেসিপিওএ) থেকে সরে যাওয়ার পর এটিই ছিল উভয় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরাসরি সংলাপ, যা ওমানের মধ্যস্থতায় হয়েছিল।
তবে গত ১৩ জুন ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েল বিমান হামলা চালানোর পর ষষ্ঠ দফা বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও সামরিক আগ্রাসনে ইসরায়েলের পাশে সীমিতভাবে অবস্থান নেয়।
এই পরিস্থিতি নিয়ে ইসমাইল বাকি বলেন, “আমরা কূটনীতি ও দরকষাকষিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি এবং খোলা মনেই আলোচনায় বসেছিলাম। কিন্তু ষষ্ঠ দফার আলোচনার আগে ইসরায়েলের জায়নবাদী শাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়েছে।”
এদিকে, ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, “ইরান সবসময় কূটনীতি ও গঠনমূলক আলোচনাকে সমর্থন করে। আমরা বিশ্বাস করি, এখনো কূটনীতির পথ খোলা আছে এবং আমরা শান্তিপূর্ণ পথেই চলব।”
ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো বহুবার অভিযোগ করেছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। তবে ইরান সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ-ও বলেছে, তারা ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদের এমন কোনো ব্যবহার লক্ষ্য করেনি বা প্রমাণ পায়নি, যা অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহৃত হতে পারে।
বর্তমানে ইরানই একমাত্র দেশ, যারা পরমাণু অস্ত্র না রেখেও ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও অস্ত্র তৈরি করতে হলে আরও বেশি মাত্রার সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন।
সারাংশে বলা যায়, সাম্প্রতিক সংঘাত ও কূটনৈতিক জটিলতার প্রেক্ষাপটে ইরান নতুন করে পরমাণু আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহী হলেও তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে—শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক অধিকার ত্যাগ কিংবা সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধের শর্ত মেনে কোনো আলোচনা নয়।