বিজ্ঞাপন
এই দীর্ঘ সময়ে গড়ে উঠেনি বন্যহাতির নিরাপদ চলাচলের অভয়ারণ্য! সীমান্তের বসবাস করা গ্রামবাসীরা মাঝে মধ্যেই হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যায়। সেইসাথে মারা পড়ছে বন্যহাতিও। হাতির আক্রমণে মানুষ মারা গেলে পরিবার পায় সরকারি সহায়তা, হাতি মারা গেলে স্থানীয় পরিবার গুলো উপরে হয় মামলা। এভাবেই চলছে শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার জনজীবন। পাহাড়ি মানুষ আর হাতির দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রয়োজনীয় স্থায়ী পদক্ষেপে নেই সরকারের কোন কার্যক্রম।
সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে ২০০০ সালের দিকে ৪/৫ টি হাতি খাদ্যের সন্ধানে আসে। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে ৫০টি গ্রামে শুরু বন্যহাতির তাণ্ডব। ২ যুগ পেরিয়ে হাতির সংখ্যা এখন ৭০/৮০ টি। হাতির তাণ্ডবে পাহাড়ি গ্রামগুলোয় মুসলিম, গারো, হাজং, কোচ, বানাই বর্মন ও হিন্দুসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস হুমকির মুখে । এদের বেশির ভাগই শ্রমজীবী ও কৃষির উপর নির্ভরশীল।গত ২ যুগেরও বেশি অধিক সময় ধারে হাতির তাণ্ডবে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি, গাছপালা, সবজি বাগান, খেতের ফসল ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় ৭০/৮০ টি হাতির পাল দিনে গভীর অরণ্যে থাকে। সন্ধ্যা নেমে আসলেই খাদ্যের সন্ধানে নেমে আসে লোকালয় ও ফসলি জমিতে। কৃষকরা খেতের ফসল ও জানমাল রক্ষার্থে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। ঢাকঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যতই হাতি তাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে ততই হাতির পাল পালাক্রমে তাণ্ডব চালাচ্ছে বাড়িঘরে। প্রতিরোধ গড়ে তুলেও রক্ষা করা যাচ্ছে না ঘরবাড়ি ও খেতের ফসল।
বিগত ২ যুগেরও বেশি অধিক সময় ধরে চরম আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে পাহাড়ি মানুষের। গ্রামবাসীরা জানান, হাতি গুলো আগে বছরের কয়েকবার ভারত থেকে এখানে খাদ্যের সন্ধানে আসতো। এখন বছরের বারো মাস এখানে থাকে হাতির দলটি।
আরো বলেন, হাতির জন্য গারো পাহাড়ে পর্যাপ্ত খাবার না থাকায়, ক্ষুধা নিবারণে মাঝে মাঝে লোকালয়ে হামলা করছে। হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ আমরা এলাকাবাসী, ঘরে খাবার না থাকলেও রাতে হাতি তাড়াতে মশাল জ্বালাতে কেরোসিন ঘরে রাখা যেন বাধ্যতামূলক। পাহাড়ি অঞ্চলে আবাদকৃত ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগুলোতে হাতির তাণ্ডব বৃদ্ধি পায়। তাণ্ডবে খেতের ফসল ঘরে তুলতে পারে না কৃষকরা।
পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা কালাপানি গ্রামের বাসিন্দা উকিল উদ্দিন, এরশাদ আলম ও বাদশা মিয়াসহ কৃষকরা জানান, ফসলের ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে ভীষণ ঝামেলা পোহাতে হয়। পাহাড়ি অঞ্চলের বেশির ভাগ জমি ‘খ’ তফসিলভুক্ত। ক্ষতিগ্রস্ত জমি রেকর্ডীয় না হলে ক্ষতিপূরণও দেয়া হয় না। এসব ঝামেলা পোহাতে চান না কৃষকরা।
আবার কেউ কেউ আবেদন করে বছরের পর বছর ঘুরছেন। এমন অভিযোগও অনেক কৃষকের। এছাড়া এলটমেন্ট ও সরকারি খাস জমির পরিমাণই বেশি। ফলে কাগজপত্রের জটিলতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ভাগ্যে জুটছে না ক্ষতিপূরণ।
জানাজায়, বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র ও বনবিভাগের পদস্থ কর্মকর্তাদের যৌথ সভায় বন্যহাতির দ্বন্দ্ব নিরসনে সিদ্ধান্ত নিলে গ্রামবাসী তাদের জানমাল রক্ষার্থে হাতির খাদ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলার পাশাপাশি গ্রামবাসীদের নিরাপত্তায় সোলার ফ্যান্সিং স্থাপনের দাবি জানান।
২০১৬ সালে ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতি কবলিত গ্রামগুলোতে স্থাপন করা হয় সোলার ফেন্সিং (বৈদ্যুতিক তারের বেড়া)। যা দিয়ে হাতি আক্রান্ত হবে, কিন্তু মারা যাবে না।
শেরপুর জেলা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, ময়মনসিংহের গারো পাহাড়ে ২০১৪ সালের পর মানুষ-হাতি দ্বন্দ্বে ৪২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অনেকেই। একই সময়ে মারা পড়েছে ৩৩টি বন্যহাতি।
অপরদিকে, বনবিভাগের পক্ষ থেকে গারো পাহাড়ে মানুষ-হাতির দ্বন্দ্ব নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৫ টি ইআরটি (এলিফেন্ট রেসপন্স টিম) গঠন করা হয়েছে। প্রতি কমিটিতে ১০ জন করে সদস্য। তারা জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করছেন। সরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে কমিটির কার্যক্রম।
হাতি-মানুষের দ্বন্দ্বের স্থায়ী সমাধানের কথা জানতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, এটার কোন স্থায়ী সমাধান নেই। তবে হাতির খাদ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কলাগাছ বিভিন্ন গাছ লাগাচ্ছি যেন হাতির খাদ্যের সংকট না হয় এবং লোকালয়ে না আসে। এবং আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে হাতির জন্য করিডরে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং সেটা দ্রুত্ব কার্যকর হবে।
-সারোয়ার হোসাইন, নালিতাবাড়ী(প্রতিনিধি)
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...