বিজ্ঞাপন
পাত্রাস থেকে এএফপি জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইতালি, বলকান এবং যুক্তরাজ্যও তীব্র দাবদাহের কবলে পড়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন এই দাবদাহকে আরও তীব্র করছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশজুড়ে হাজার হাজার দমকলকর্মী আগুন নেভাতে কাজ করছেন।
গ্রিসের দমকল বিভাগের মুখপাত্র ভ্যাসিলিস ভাথ্রাকোগিয়ানিস জানিয়েছেন, “যেসব কর্মী আগুন নেভাতে কঠিন লড়াই করছে, তাদের জন্য পরিস্থিতি এখনো কঠিন।” পশ্চিম গ্রিসের বেসামরিক সুরক্ষা প্রধান নিকোস গিফতাকিস রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেন, তীব্র তাপমাত্রা, দমকা বাতাস ও কম আর্দ্রতা পরিস্থিতি আরও জটিল করছে।
পাত্রাসের বাইরে ঝোপঝাড় ও বনাঞ্চলে হেলিকপ্টারের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। ঘন ধোঁয়ার কারণে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আছে। একটি হাসপাতাল থেকে ১২ জন শিশু ও একটি অবসর নিবাস থেকে ৮০ জন বৃদ্ধকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে দেখা গেছে, ১৭শ শতকের একটি মঠের ছাদে আগুন লেগেছে।
জনপ্রিয় আইওনিয়ান পর্যটন দ্বীপ জান্তে, সেফালোনিয়া ও এজিয়ান দ্বীপ চিওসেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার পশ্চিমা আচাইয়া অঞ্চলের প্রায় ২০টি গ্রাম খালি করা হয়েছে। গ্রিক কোস্টগার্ড জানিয়েছে, চিওস ও পাত্রাসের আশপাশ থেকে প্রায় ৮০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭১ জনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিভিল প্রোটেকশন মেকানিজম থেকে চারটি জল-বোমা বিমান চেয়েছে গ্রিস। এদিকে প্রধান বিরোধী দল পাসোক সরকারের আগুন মোকাবিলায় প্রস্তুতির অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং বাহিনীগুলোর সমন্বয় দুর্বলতা ও স্থানীয় জরুরি পরিকল্পনার অভাবের সমালোচনা করেছে।
স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কাস্তিল ও লিওন অঞ্চলের একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী রোমান খনি আগুনের ঝুঁকিতে পড়েছে। ২৬টি এলাকার প্রায় ৬ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সাতজনের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফার্নান্দো গ্রান্দে-মার্লাসকা জানিয়েছেন, স্পেনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে দু’টি জল-বোমা বিমান চেয়েছে। কাস্তিল ও লিওনের বেসামরিক সুরক্ষা প্রধান আইরিন কোর্তেস বলেন, দীর্ঘ দাবদাহে সৃষ্ট ঘন ঝোপঝাড় আগুন ছড়িয়ে পড়ার জন্য ‘সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ’ তৈরি করেছে। এ বছর স্পেনে ১৯৯টি দাবানলে প্রায় ৯৮ হাজার ৭৮৪ হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
পাশের দেশ পর্তুগালে ২ হাজার ১০০ জনেরও বেশি দমকলকর্মী ও ২০টি বিমান দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সবচেয়ে ভয়াবহ আগুনটি মধ্যাঞ্চল ত্রানকোসো পৌরসভায় শনিবার থেকে জ্বলছে। প্রবল বাতাসে আগুন আবারও ছড়িয়ে পড়েছে এবং কাছের গ্রামগুলো হুমকির মুখে।
এছাড়া মধ্যাঞ্চলীয় আরগানিল-এর পাহাড়ি অঞ্চলে আগুন লাগার কারণে বেশ কয়েকটি গ্রাম ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, বয়স্ক বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে দমকল কর্মীদের সহায়তা করছেন।
বলকান অঞ্চলেও তীব্র খরা ও দাবদাহের কারণে ডজনখানেক আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। আলবেনিয়ায় ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিজের বাগানে লেগে যাওয়া আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন। মন্টিনিগ্রোতে রাজধানী পডগরিকার কাছে পানি বহনকারী ট্রাক উল্টে এক সেনার মৃত্যু হয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে শীতল আবহাওয়ার দেশ যুক্তরাজ্য এই গ্রীষ্মে চতুর্থ দফা তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছে। উত্তর ইংল্যান্ডের নর্থ ইয়র্ক মুরস জাতীয় উদ্যানে দাবানলকে বুধবার ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা’ ঘোষণা করা হয়েছে। আগুনে প্রায় পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্বের নানা প্রান্তে বাড়তে থাকা এই দাবানলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে—যা মোকাবিলায় জরুরি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...