Logo Logo

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ ফের বৈঠকে বসছে ঐকমত্য কমিশন

পিআর ও জুলাই সনদ নিয়ে নতুন বিরোধ


Splash Image

গ্রাফিক্স : ভোরের বাণী।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন ইস্যুতে নতুন করে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যখন জুলাই সনদ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে, তখন এই দুটি প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে প্রকট মতপার্থক্য রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


যুগপৎ আন্দোলনে ইসলামী দলগুলোর ঘোষণা

জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস ও মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সংসদের উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। যদিও অভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি দিলেও জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানিয়েছেন, তারা আপাতত যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছেন না।

এদিকে প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)ও এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। তবে এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ শেষ মুহূর্তে ভিন্নমত দিয়েছে।

জাগপার ৭ দফা

রাজধানীর পল্টনে জাগপার সংবাদ সম্মেলনে সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান ঘোষণা দেন সাত দফা দাবির। এর মধ্যে রয়েছে—

১। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও সেই সনদের আলোকে জাতীয় নির্বাচন

২। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচার

৩। আওয়ামী আমলে সংঘটিত গণহত্যা, জুলুম ও দুর্নীতির বিচার

৪। ভারতের সঙ্গে হওয়া গোপন চুক্তি প্রকাশ ও বাতিল

৫। জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ

৬। উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন

৭। নির্বাচনে সমান প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ

কর্মসূচি অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে বিক্ষোভ, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে গণসংযোগ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব সাংগঠনিক জেলায় বিক্ষোভ হবে।

নেজামে ইসলাম ও খেলাফত আন্দোলনের ঘোষণা

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি পাঁচ দফা দাবিতে একই ধরনের তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে—জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, জাপা ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, গণহত্যার বিচার, নির্বাচনে সমান মাঠ তৈরি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন সাত দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের বিচার, শাপলা শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি রয়েছে।

বিএনপির অবস্থান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। সময় আছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।” তিনি রবিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলেন। তার মতে, বিলম্ব হলে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।

ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে দলগুলোর সঙ্গে দুই দফা অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে ৮৪টি প্রস্তাবে প্রাথমিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় সনদটি আটকে আছে।

বিএনপি চায় পরবর্তী জাতীয় সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে প্রস্তাব বাস্তবায়ন হোক। জামায়াতে ইসলামী সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে এবং এনসিপি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। কয়েকটি দল সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সের মাধ্যমেও এই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে এই নতুন মতবিরোধ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। ইসলামী দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন নির্বাচনি রাজনীতির মাঠ গরম করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেউ কেউ একে নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতা বা বৃহত্তর বোঝাপড়ার সম্ভাবনা হিসেবেও দেখছেন।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...