বিজ্ঞাপন
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরায়েলের হামলা ক্রমশ বাড়ছে বলে সোমবার (২৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, গত ১০ অক্টোবর ঘোষিত যুদ্ধবিরতি গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপ কিছুটা কমালেও, সেখানে এখনও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে লেবানন, সিরিয়া ও পশ্চিম তীরেও দেশটি নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। এটিকে প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল ও দুর্বল রাখার ইসরায়েলি নীতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
পশ্চিম তীরে দমন অভিযান ও দখলদারিত্বের প্রচেষ্টা
ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান জোরদার করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু পশ্চিম তীরেই ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল এই অঞ্চলের দখল আরও পাকাপোক্ত করতে চাইছে। ইসরায়েলি সৈন্য ও বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের জলপাই সংগ্রহে বাধা দিচ্ছে, হেনস্তা করছে এবং গ্রেপ্তারও করছে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়াতে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ তার সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ট্রাম্প পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। তিনি আরও বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের “সার্বভৌমত্ব” ঘোষণা করতে হবে, এতে করে “ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিপজ্জনক ধারণা” ঠেকানো যাবে।
সিরিয়া ও লেবাননে নিয়মিত হামলা
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিরিয়াতেও ইসরায়েলি হামলা বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকার পতনের পর থেকেই সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত রোববার সকালে দক্ষিণ সিরিয়ার কুনেইত্রা প্রদেশের আল-রাজানিয়া ও সাইদা আল-হানুত গ্রামে ইসরায়েলি বাহিনী প্রবেশ করে সাময়িক চেকপোস্ট স্থাপন করে বলে খবর দিয়েছে সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা।
জাতিসংঘে সিরিয়ার প্রতিনিধি ইব্রাহিম ওলাবি গত ২৪ অক্টোবরের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেন, ইসরায়েলকে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং গোলান মালভূমিসহ দখলকৃত অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে।
অন্যদিকে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের নিয়মিত বিমান ও ড্রোন হামলা চলছে। সোমবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী ইউএনআইএফআইএল জানায়, তাদের টহল দলের কাছে গ্রেনেড নিক্ষেপ করায় তারা একটি ইসরায়েলি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে। গত রোববার ইসরায়েল বালবাকের নবি চিত ও দক্ষিণ লেবাননের নাকুরা এলাকায় দুই জনকে হত্যা করে। যদিও ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, তারপরও ইসরায়েল এখনো লেবাননের ভেতরে অবস্থান করছে এবং প্রায় প্রতিদিন বোমা হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েল দাবি করছে, হিজবুল্লাহর পুনর্গঠন ঠেকাতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা ও উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ইসরায়েল সফর করলেও, তেল আবিবের প্রধান মিত্র ওয়াশিংটন এখনো ইসরায়েলের এসব আঞ্চলিক আগ্রাসনের দায় নিতে বা থামাতে আগ্রহী নয়, বরং গাজার পরিস্থিতিতেই মনোযোগ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত সপ্তাহে ইসরায়েল সফরে বলেন, ১০ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি “প্রত্যাশার চেয়েও ভালোভাবে” চলছে। তবে বাস্তবে ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবার রাতে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একজন নিহত ও চারজন আহত হন বলে জানিয়েছে আল-আউদা হাসপাতাল। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইসরায়েল রাফাহ সীমান্ত দিয়ে অসুস্থদের দেশত্যাগেও বাধা দিচ্ছে।
লেবানন সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে, ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের দায়ে জবাবদিহির আওতায় আনতে। তবে মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাক এখনো ইসরায়েলকে থামাতে পারেননি, ফলে দেশজুড়ে ফের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...