বিজ্ঞাপন
গোপালগঞ্জ জেলার পাইকান্দি ইউনিয়নের চর পুকুরিয়া গ্রামের এনামুল খা (পিতা: মৃত তৈয়ব খা)–এর বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রতারণা ও অবৈধ আদম ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে বহু প্রবাস প্রত্যাশীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আকামা বিহীনভাবে বিদেশে পাঠিয়ে দেন, পরে তাদেরকে সেখানকার মরুভূমির ভেতরে কাজ, বাসস্থান ও বৈধতা ছাড়াই ফেলে রাখেন।
ভুক্তভোগী রেহানা ছেলে হাবিব মোল্লা (মানিকদহ) ফাতেমা ছেলে মুহাম্মদ রোকন মোল্লা ও ময়না বেগম স্বামী শহিদুল ইসলাম রামপাল জানান, এনামুল খা তাদের কাছ থেকে বিদেশে নেওয়ার নাম করে ১০ লক্ষ টাকা নেন। সৌদি আরবে পাঠালেও তারা আকামা বা বৈধ চাকরির কোনো অনুমতি পাননি, ফলে সেখানে অমানবিক কষ্ট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন।
এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ খোকন মোল্লা অভিযোগ করেন, এনামুল খা প্রায় ছয় মাস আগে তার কাছ থেকেও ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেন। টাকা গ্রহণ করেন এনামুল খার স্ত্রী শিল্পী বেগম। কিন্তু টাকা ফেরত চাইতে গেলে দম্পতি দুর্ব্যবহার ও হুমকি প্রদান করেন বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এনামুল খা বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন, তবে যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলেন, “আমরা সর্বস্ব হারিয়ে ন্যায্য বিচার চাইতে ঘুরছি, কিন্তু আজও কোনো সহায়তা পাইনি।”
আইনজীবীদের মতে, এনামুল খা ও তার সহযোগীদের কার্যক্রম “প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইন, ২০১৩” এবং “মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২” অনুযায়ী গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইন, ২০১৩ ধারা ৩১: প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো বা আকামা ছাড়া বিদেশে পাঠানো অপরাধ। শাস্তি: সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। ধারা ৩২: অনুমোদন ব্যতীত বিদেশে কর্মী পাঠানো অপরাধ। শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। ধারা ৩৫: ভুয়া চুক্তি বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বিদেশে পাঠানোর অপরাধ। শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ যদি বিদেশে নিয়ে শোষণ বা অমানবিক অবস্থায় ফেলে রাখা হয়, তবে তা মানব পাচার হিসেবে গণ্য হবে। ধারা ৭(১): শাস্তি: যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি (Penal Code) ধারা ৪২০: প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া - সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা। ধারা ৪০৬: বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধ - সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড।
ভুক্তভোগীরা দ্রুত এনামুল খা ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগমের বিরুদ্ধে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইন, ২০১৩-এর ধারা ৩১, ৩২, ৩৫ এবং মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২-এর ধারা ৭(১) অনুযায়ী কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের আহ্বান— “আর যেন কোনো পরিবার এভাবে সর্বস্ব হারিয়ে মরুভূমিতে না ফেলে রাখা হয়।"
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...