বিজ্ঞাপন
নিয়োগে জালিয়াতি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পদোন্নতি, চাল চুরি, দায়িত্ব অবহেলা এবং নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে এই শাস্তি প্রদান করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর ২০২৫) কোম্পানির প্রশাসন ও এইচআরএম বিভাগের ইনচার্জ এবং ব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে পলাশ কুমার ঠাকুরকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আদেশটি জারি হওয়ার পর থেকেই এটি ইডিসিএল কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অবৈধ নিয়োগ থেকে পুনঃনিয়োগ—বিতর্কের ইতিহাস
অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, পলাশ কুমার ঠাকুর ২০০০ সালের ৭ মে ‘শ্রমিক’ পদে প্রথম নিয়োগ পান। কিন্তু পরে পূর্বের পদত্যাগ ছাড়াই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সার্ভিস রুলস বহির্ভূতভাবে ‘কনিষ্ঠ কর্মকর্তা’ হিসেবে নিয়োগ নেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ ছিল।
২০০৭ সালে প্রশাসন বিভাগের ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকার সময় চাল চুরির অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং পরে টার্মিনেট করা হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ২০১০ সালে নিয়ম ভেঙে তিনি পুনরায় ‘ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ পদে যোগদান করেন।
এক বছরের মাথায় তিনি অস্বাভাবিকভাবে উপ-ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি পান, যার বিষয়ে ২০১৮ সালে বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদপ্তর অডিট আপত্তি তোলে। সর্বশেষ ২০২১ সালে রাজনৈতিক প্রভাবেই তিনি ব্যবস্থাপক পদে উন্নীত হন।
নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানি—অভিযোগ প্রমাণিত
নথিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, তার অধীনস্থ এক নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে প্রাথমিকভাবে অভিযোগটি সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
দায়িত্ব অবহেলা: অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বীকারোক্তি
২০১১ সালে গোপালগঞ্জ পেনিসিলিন ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জন্য পলাশ কুমার ঠাকুরের দায়িত্ব অবহেলা সরাসরি দায়ী ছিল বলে তদন্ত নথিতে উল্লেখ রয়েছে। তিনি সে সময় ঘটনার দায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
নিয়ম লঙ্ঘনে কঠোর সিদ্ধান্ত
পলাশ কুমার ঠাকুরের একাধিক অনিয়ম, প্রতারণা, অসদাচরণ এবং কোম্পানির ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী কর্মকাণ্ডের কারণে কোম্পানির সার্ভিস রুলস ৩৫ (iii & v) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। একই সঙ্গে নিয়োগপত্রের ১০ নম্বর শর্তও ভঙ্গ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং আইন উপদেষ্টার মতামতের ভিত্তিতে সার্ভিস রুলসের ৩৬ সাব ক্লজ ১(বি) অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।
ইডিসিএলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এ ধরনের অনিয়ম ও অসদাচরণ প্রতিষ্ঠানটির সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...