বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের মতে, হাওর ও বিলে মাছ বিলুপ্তির পেছনে একাধিক কারণ একসঙ্গে কাজ করছে। অবৈধ কারেন্ট জালের নির্বিচার ব্যবহার, প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার, বিল ও জলাভূমি দখল এবং অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের ফলে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে হাওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও মাছের প্রজনন প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহলের দখলদারিত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর হচ্ছে না। ফলে আইনের ফাঁক গলে চলছেই অবৈধ জাল ব্যবহার ও মাছ নিধন। এতে হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধ্বংসের মুখে পড়ছে।
এই পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছেন হাওরপাড়ের জেলে ও দরিদ্র মানুষ। মাছ কমে যাওয়ায় অনেক জেলে পরিবার তাদের প্রধান জীবিকা হারাচ্ছে। এতে দারিদ্র্য বাড়ছে, তৈরি হচ্ছে সামাজিক সংকট ও অনিশ্চয়তা। স্থানীয়রা বলছেন, একটি জেলার প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হওয়া মানে সেই জেলার অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকেই ঝুঁকির মুখে ফেলা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট উত্তরণে প্রথম ও প্রধান করণীয় হলো আইনের কঠোর প্রয়োগ। কারেন্ট জাল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধে কার্যকর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দখলকৃত বিল ও জলাভূমি উদ্ধার করে সেগুলোকে প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
এ ছাড়া স্থানীয় জেলে ও হাওরবাসীকে সম্পৃক্ত করে সহ-ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। হাওরে মাছের অভয়াশ্রম বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ নিশ্চিত করা এবং জেলেদের জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করাকে সময়ের দাবি হিসেবে দেখছেন তারা। কাগুজে প্রকল্প নয়, বাস্তবভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
স্থানীয়দের ভাষায়, হাওর বাঁচলে সুনামগঞ্জ বাঁচবে, মাছ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই হাওর, বিল ও মাছের গল্প কেবল ইতিহাসের পাতাতেই খুঁজে পাবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...