ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
কেউ শুধু দুধ খেতে চায়, কেউ আবার কেবল বাইরের খাবার বা মিষ্টিজাত খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে। এতে অনেক অভিভাবক চিন্তিত হয়ে পড়েন—এটা কি স্বাভাবিক, নাকি কোনো সমস্যা?
শারীরিক বৃদ্ধির গতি ও ক্ষুধার সম্পর্ক
জন্মের প্রথম বছরে শিশু প্রায় সাত কেজি ওজন বাড়ায়, কিন্তু দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সে এই বৃদ্ধির হার বছরে মাত্র দুই কেজি। ফলে তাদের শক্তির প্রয়োজন কমে যায় এবং ক্ষুধাও স্বাভাবিকভাবে কমে। এর সঙ্গে যোগ হয় পছন্দ-অপছন্দ বোঝার বয়স, আর ‘না’ বলার শেখা—যা খাওয়ার সময় রীতিমতো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
অভিভাবকের আচরণে প্রভাব পড়ে
অনেক সময় অভিভাবকের অতিরিক্ত উদ্বেগ, জোর করে খাওয়ানো, বা মোবাইল-টিভি দেখে খাওয়ানোর অভ্যাস শিশুর স্বাভাবিক ক্ষুধা নষ্ট করে দেয়। এতে শিশুরা খাবারকে আনন্দের বদলে শাস্তির প্রতীক মনে করতে শুরু করে।
শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত কারণ
ভাইরাস জ্বর বা ঠান্ডা, পেটের অসুখ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া), কৃমি বা প্যারাসাইট, থাইরয়েড সমস্যা, মানসিক চাপ বা আবেগজনিত কারণ, এসব কারণেও শিশুর খাওয়ার আগ্রহ কমে যেতে পারে।
যখন চিন্তার কারণ হয়
খাওয়া কমে যাওয়াটা সবসময় সমস্যা নয়, যদি শিশু মাঝে মাঝে কম খায়, আবার খায়, ওজন ঠিকঠাক বাড়ছে খেলাধুলা করে, হাসিখুশি থাকে।
তবে বিপদের লক্ষণ:
টানা ২-৩ সপ্তাহ কিছু খেতে চায় না
ওজন কমে যায়
দুর্বলতা বা স্থবিরতা দেখা দেয়
এই অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সমাধানে করণীয়
দিনে ৫-৬ বার ছোট পরিমাণে খাবার দিন
খাবারে বৈচিত্র্য আনুন
স্ক্রিনমুক্ত পরিবেশে খাওয়ান
সবাই মিলে একসাথে বসে খাওয়ার অভ্যাস করুন
শিশুকে নিজের হাতে খেতে উৎসাহ দিন
রঙিন চামচ, বাটি ব্যবহার করুন
জোর করে নয়, গল্প বা খেলাধুলার মাধ্যমে খাওয়ান
আয়রন ও ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার দিন: কলা, খেজুর, পেঁপে, ডিম, শাক, তিল ইত্যাদি
জুসের পরিবর্তে চিবিয়ে খাওয়া ফল খেতে দিন—এতে ফাইবার ও পুষ্টিগুণ বেশি বজায় থাকে।
শেষ কথা
খাবারের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক যেন হয় ভালোবাসা ও আনন্দের। জোরাজুরি নয়, ধৈর্য, যত্ন ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে তাকে খাওয়াতে উৎসাহ দিন। একদিন সে নিজেই খেতে আগ্রহী হয়ে উঠবে—শুধু তাকে সময় দিন।
- ডা. হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া
নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ