বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানান, মোবারক আলী ফকিরের মালিকানাধীন জমির একটি সরকারি তালগাছে অর্ধশতাধিক বাবুই পাখির বাসা ছিল। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে হঠাৎ করেই গাছটি কেটে ফেলা হয়। মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে বাসাগুলো। ভেঙে যায় অসংখ্য ডিম, মারা যায় শতাধিক বাবুই ছানা।
এ দৃশ্য স্থানীয়রা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করলে তা ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসন, পাখিপ্রেমী, পরিবেশবাদী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নেমে আসে শোক ও ক্ষোভের ছায়া। সবাই এ ঘটনার নিন্দা জানায় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে। দুই দিন পর রবিবার (২৯ জুন) স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে সরকারি গাছ কাটার অভিযোগে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় রুজু করা হয়, যার নম্বর ২২। এতে মোবারক আলী, মিজানুর রহমান ও ফারুক হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, “এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।” অন্যদিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়েও আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার POR নং ০১/ঝাল/২০২৪-২৫।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বলেন,
“এই গাছটি শুধু একটি গাছ ছিল না, ছিল শত প্রাণের আবাস। যারা এটা কেটেছে, তারা নিষ্ঠুরতার প্রতিচ্ছবি। প্রজননের সময় গাছ কেটে ছানা মেরে ফেলা কতটা অমানবিক হলে সম্ভব!”
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, “দায় শুধু গাছ কাটায় জড়িতদের নয়, পুরো সমাজ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা এতে স্পষ্ট। আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই বললেই চলে।”
পরিবেশ সচেতন নাগরিক সাব্বির হোসেন বলেন, “এই গাছটি শুধু প্রাকৃতিক শোভা নয়, ছিল একটি জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্র। যারা এটি কেটেছে, তারা শুধু গাছ নয়, একটি প্রজন্মের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের দীর্ঘ নীরবতা অপরাধীদের মনোবল বাড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার পরও যদি দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হয়, ভবিষ্যতে আর কোনো বাবুই ছানা বা পাখির ঝাঁক নিরাপদ থাকবে না।
-মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি