ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
কলেজে পাঠদান না হলেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল ১০টা থেকে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা কলেজে প্রবেশ করেন, কিন্তু ছিল না তাদের চিরচেনা কোলাহল। পুরো ক্যাম্পাসে নেমে আসে এক নিস্তব্ধতা। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা—যেখানে অংশ নেন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিরা ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন যেই ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে ক্লাসে যেতাম, আজ সেখানে শুধুই পোড়া গন্ধ আর শূন্যতা। আজকে কোনো ক্লাস হয়নি। আমরা শুধু পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময়ের জন্য এসেছি।”
একাদশ শ্রেণির ছাত্র রবিউল ইসলাম বলেন, “ক্যাম্পাসে পা রাখতেই চোখে পানি এসে গেলো। এই মাঠে একসঙ্গে কত হাসিখুশি সময় কেটেছে আমাদের। আজ সব স্তব্ধ। আমার সহপাঠীরা আর ফিরে আসবে না ভাবতেই বুকটা ভার হয়ে আসে।”
কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল জানান, শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এই সীমিত পরিসরে কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছে, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। মানসিক প্রশান্তি ফিরে পেতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।”
তিনি আরও জানান, কলেজে আজও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বিমান বাহিনীর সহায়তায় কলেজ ক্যাম্পাসে চালু থাকা চিকিৎসা ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করছেন এবং কেউ চাইলে একান্ত আলাপের সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে কলেজের ভবনের একাংশে আগুন ধরে যায়, প্রাণ হারান কয়েকজন শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার পর মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন দফায় ছুটি ঘোষণা করে এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি ২ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল। তবে এ সময় চালু ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম, আহতদের সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম।
এই শোকাবহ অধ্যায়ের মধ্যেও শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজের পারস্পরিক সহানুভূতি ও মানবিকতা কলেজটির বড় শক্তি হয়ে উঠেছে—যা নতুন করে পথচলার অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...