বিজ্ঞাপন
এতে দেশটির বহুল সম্ভাবনাময় পোশাক খাত বড় ধরনের সংকটে পড়েছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে তুরস্কের গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু মার্কিন ক্রেতা ইতোমধ্যেই তাদের অর্ডার স্থগিত রেখেছে, আর কেউ কেউ জোর দিচ্ছেন উৎপাদন যেন এমন দেশে সরিয়ে নেওয়া হয় যেখানে শুল্কের হার তুলনামূলক কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক ব্র্যান্ড গ্যাপ ও কোল’স-এর পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পার্ল গ্লোবাল জানিয়েছে, নতুন শুল্ক ঘোষণার পর থেকেই বহু ক্লায়েন্ট ফোন করে বাড়তি খরচ বহন ও উৎপাদন স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইছেন। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও গুয়াতেমালায় কারখানা থাকা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পল্লব ব্যানার্জি রয়টার্সকে বলেন, “সব ক্রেতাই আমাকে ফোন করছেন। তারা চাইছেন, আমরা যেন ভারতে না থেকে অন্য দেশে উৎপাদন স্থানান্তর করি।”
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভারতের পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে ২৫ শতাংশ কার্যকর হয়েছে, আর আগামী ২৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বাকি ২৫ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক হবে ২০ শতাংশ এবং চীনের ওপর ৩০ শতাংশ।
চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ১১৩ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রিচাকো এক্সপোর্টস—যার ক্লায়েন্টের মধ্যে আছে জে. ক্রু গ্রুপ—বলে, শিল্পে এখন “খরা” চলছে। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক দিনেশ রহেজা জানান, তারা নেপালের কাঠমান্ডুতে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন।
ভারতের শীর্ষ পোশাক প্রস্তুতকারক রেমন্ড–এর অর্থ বিভাগের প্রধান অমিত আগরওয়াল বলেন, ইথিওপিয়ায় মার্কিন শুল্ক মাত্র ১০ শতাংশ হওয়ায় তারা সেখানকার একটি কারখানায় উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন, যা আগামী তিন মাসের মধ্যে শুরু হতে পারে।
নিটওয়্যারের রাজধানী তামিল নাড়ুর তিরুপপুর থেকে ভারতের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ হয়। চলতি বছরের শুরুতে এখানকার রপ্তানিকারকরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে অনেক ক্রেতা অর্ডার স্থগিত করছেন এবং কেউ কেউ ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই যতটা সম্ভব পণ্য পাঠানোর তাগিদ দিচ্ছেন।
কটন ব্লসম ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক নবীন মাইকেল জন জানান, তিরুপপুরের বেশ কিছু কারখানা ইতোমধ্যেই অর্ডার স্থগিতের চাপে পড়েছে। তিরুপপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এন থিরুকুমারন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেসব পোশাকের দাম মাত্র ১ ডলার থেকে শুরু হয়ে সাড়ে তিন থেকে ৫ ডলার পর্যন্ত—তার ওপরও সমানভাবে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভারতের পোশাক খাত শুধু মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হারাবে না, বরং উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরের ঢেউ দেশটির শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...