গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, ছবি: সংগৃহীত(আল জাজিরা)
বিজ্ঞাপন
গাজা উপত্যকায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাদের টানা বোমাবর্ষণে বুধবার একদিনেই অন্তত ৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ৪৩ জন গাজা সিটিতে। আশ্রয়কেন্দ্র, তাঁবু ও সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে চালানো এসব হামলায় পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। শেখ রাদওয়ান এলাকায় গ্রেনেড হামলায় আগুন ধরে বহু মানুষের তাঁবু ভস্মীভূত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, “শেখ রাদওয়ান এখন পুড়ছে, আমরা সবাই মৃত্যু ঝুঁকিতে আছি।”
গাজার গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন সপ্তাহে গাজা সিটিতে অন্তত ১০০ রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে ইসরায়েল, যা দিয়ে আবাসিক ব্লক ও মহল্লা ধ্বংস করা হয়েছে। ১৩ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত কেবল গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১,১০০ ফিলিস্তিনি। আল জাজিরার প্রতিবেদনে পরিস্থিতিকে “অ্যাপোক্যালিপ্টিক” বা প্রলয়ঙ্কর বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত এক নারী সাবরিন আল-মাবহুহ বলেন, “আমার ভাইকে ঘরের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানসহ পুরো পরিবারকেই নিশ্চিহ্ন করেছে।”
এদিকে হামাস বুধবার জানিয়েছে, তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি এবং সব ইসরায়েলি বন্দি মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দাবি করছে। কিন্তু ইসরায়েলি সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—যুদ্ধ কেবল তখনই থামবে, যখন হামাস নিরস্ত্রীকরণে রাজি হবে। হামাস ইসরায়েলের আল-জারিসি পরিবারে হামলাকে “ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি ফিলিস্তিনি জীবন ধ্বংসের পরিকল্পিত অংশ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরোধের কারণে খাদ্য প্রবেশ আটকে থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে আরও ছয়জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু। এখন পর্যন্ত অবরোধজনিত দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৬৭ জন, এর মধ্যে ১৩১ শিশু। ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু চরম অপুষ্টিতে মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা (IPC) নিশ্চিত করেছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং তা দ্রুত দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে। মানবিক সহায়তা পুরোপুরি আটকে দেওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন এখন টিকে থাকার সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল-আরিয়ান বলেছেন, “ইসরায়েলের এই অভিযান নিঃসন্দেহে গণহত্যা, যা তারা করছে সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সুযোগে।”
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলবিরোধী ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। ফ্রান্স, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে রয়েছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইউরোপের নীরবতাকে “গুরুতর ব্যর্থতা” আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে সরাসরি “গণহত্যা” বলেছেন।
স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো কোনো সরকারি অর্থায়ন পাবে না। একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাজ্য সরকারকে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন।
আরব আমিরাতও সতর্ক করেছে, পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার ইসরায়েলের পরিকল্পনা “লাল রেখা” অতিক্রমের সমান এবং এর ফলে আব্রাহাম চুক্তি ভেঙে যেতে পারে। সিনিয়র কূটনীতিক লানা নুসেইবেহ বলেছেন, “আমরা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে, আমাদের অবস্থান বদলায়নি।”
অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের উট্রেখট বিশ্ববিদ্যালয় ইসরায়েলের সঙ্গে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর উইলকো হাজেলেগার বলেন, “গণহত্যার নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই নতুন কোনো সহযোগিতা শুরু হবে না ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
সূত্র- আল জাজিরা
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...