বিজ্ঞাপন
চারদিকে ভাঙা কাঁচ, ধসে পড়া দেয়াল ও ছাদ—দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোনো ভবনের দৃশ্য। অথচ দুদিন আগেও ভবনটি ছিল প্রাণচঞ্চল, শ্রমিকদের আনাগোনায় সরব। এখন সেই ভবনের শ্রমিকরা জীবিকা হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে ইপিজেডের ওই ভবনের সপ্তম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে ভবনের সুতা, তুলা, চিকিৎসা সামগ্রী, যন্ত্রপাতিসহ বিপুল পরিমাণ মালামাল পুড়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, আগুন লাগার পর সন্ধ্যা নাগাদ পুরো ভবনটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র তাপে কয়েকশো মিটার দূর পর্যন্ত উত্তাপ অনুভূত হচ্ছিল। মাঝে মাঝে ছোট ছোট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আগুনের তাপে ভবনের ছাদ ও দেয়াল ধসে পড়ে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাপের কারণে কাছে যেতে পারেননি; দূর থেকে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালানো হয়।
পরবর্তীতে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি তারা সম্মিলিতভাবে আগুন নেভানোর কাজ চালায়।
পুড়ে যাওয়া ভবনে দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল—অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড। সেখানে অন্তত পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। আগুনে ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন।
অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইলের শ্রমিক শফিক আহমেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “বৃহস্পতিবারের আগুনে কারখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন আমার কাজ নেই। তবুও আমি ছুটে এসেছি প্রিয় কারখানাটির সামনে। পরিবার নিয়ে কীভাবে বাঁচব—সেই চিন্তায় দিন কাটছে।”
অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইলের ফিন্যান্স ম্যানেজার রিফাত হাসান বলেন, “বেতন–ভাতা বা কারখানা পুনরায় চালু বিষয়ে এখনও কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
সিইপিজেড বেপজার নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান বলেন, “আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুরো ভবনটি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে। আগুনের এমন পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।”
অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত আরেকটি প্রতিষ্ঠান জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের কারখানাটি পুনরায় চালু হতে কত সময় লাগবে, সেটিও এখন অনিশ্চিত।
এদিকে, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে পুরো এলাকার মানুষের মনে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও আগুনের উৎস নির্ধারণে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...