বিজ্ঞাপন
অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা সেই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। অন্যদিকে সচিব ও চেয়ারম্যানের অবহেলা, অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং তথ্য গোপনের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর ডুমুরিয়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলি আহমেদ শেখ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিন মাসের ছুটিতে যান। এরপর উপজেলা প্রশাসন পাকুড়তিয়া ২নং ওয়ার্ডের সদস্য নিজাম শেখকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসে পরিষদের প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকার আয় কোনো উন্নয়ন খাতে ব্যয় না করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ১২ জন ইউপি সদস্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিষদের ব্যাংক হিসাবের সাম্প্রতিক লেনদেনেও অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে অফিস থেকে কোনো রেকর্ড দেখানো হয়নি।
ইউপি সচিব বিশ্বাস মো. ফেরদাউস ইসলামের আচরণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সাবেক চেয়ারম্যান আলি আহমেদ শেখ অবশ্যই তিন মাসের অনারিয়াম পাবেন।” কিন্তু আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “আপনাদের কেন দেখাবো?” পরে সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে আরও জানতে চাইলে তিনি নীরব থেকে স্থান ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজাম শেখ ও সচিব ফেরদাউস ইসলাম মোটরসাইকেলে করে ইউনিয়ন পরিষদ ত্যাগ করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি দপ্তরে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রায়ই ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরেই প্রকাশ্যে ধূমপান করেন। অফিসে উপস্থিতি নিয়েও রয়েছে অনিয়ম—তারা ইচ্ছেমতো সময়ে আসেন ও চলে যান। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও কর্মকর্তাদের দেখা মেলে না।
চিতুলিয়া গ্রামের সিরাজ শেখ অভিযোগ করে বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সচিব বা চেয়ারম্যানকে পাওয়া যায় না। পেলেও নানা অজুহাতে বসিয়ে রাখেন। বিশেষ করে মহিলারা গেলে সচিব ভালো ব্যবহার করেন না।”
লেবুতলা কালি খোলা গ্রামের আসিফ শেখ বলেন, “আমরা পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান বা সচিব আমাদের কথা শোনেন না। বসিয়ে রাখেন, তারপর ব্যক্তিগত কাজের অজুহাতে চলে যান।”
বাঁশবাড়িয়া গ্রামের তাফসীর তালুকদার বলেন, “আমার জমি পার্শ্ববর্তী লোক জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। সরকারি আমিন দিয়ে মাপজোক করালে প্রমাণিত হয় জমিটি আমার। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলে ইউএনও চেয়ারম্যানকে তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের দেখা মেলে না। ফোনে যোগাযোগ করলে আসার কথা বলেন, কিন্তু আসেন না।”
একই গ্রামের শারমিন আক্তার জানান, “ডুমুরিয়া ইউনিয়নে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, এমনকি নামের তালিকায় যুক্ত করতেও টাকা লাগে।” পাশে থাকা অন্য এক নারী যোগ করে বলেন, “আমরা পরিষদে গেলে ভালোভাবে কেউ কথা বলে না। বসিয়ে রাখে ঘন্টার পর ঘন্টা। মনে হয় আমরা ভিক্ষা চাইতে গেছি।”
স্থানীয় সচেতন নাগরিক ছানা তালুকদার বলেন, “ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এখন সাধারণ মানুষের জন্য নয়, কিছু প্রভাবশালীর ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া।”
অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজাম শেখ ও সচিব বিশ্বাস মো. ফেরদাউস ইসলামের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
সাবেক চেয়ারম্যান আলি আহমেদ শেখ মুঠোফোনে ভোরের বাণী-কে বলেন, “আমি ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে গিয়েছিলাম। তবে শুনেছি, পরিষদের আর্থিক কার্যক্রমে অনিয়ম হয়েছে। প্রশাসনের উচিত স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।”
বিষয়টি নিয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার বলেন, “বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা যদি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন, তা কখনোই বরদাস্ত করা হবে না।”
স্থানীয়দের মতে, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপই পারে এই অনিয়মের অবসান ঘটাতে। তাদের একটাই দাবি—স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...