বিজ্ঞাপন
এই খসড়ায় এখন পর্যন্ত বড় কোনো নীতিগত আপত্তি না থাকলেও, সনদের ভূমিকা ও উপসংহারের ভাষা ও শব্দচয়ন নিয়ে এনসিপি ও জামায়াতসহ কয়েকটি দল সংশয় প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট দলগুলো জানিয়েছে, বুধবার (৩০ জুলাই) তারা লিখিতভাবে কমিশনে মতামত জমা দেবে।
মঙ্গলবার দুপুরে মধ্যাহ্নভোজ বিরতির সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি এবং বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) নেতারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।
আইনগত ভিত্তি ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার গঠন নিয়ে জোরালো মত
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন বলেন, “যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা নির্বাচনের আগেই আইনগত ভিত্তি পেতে হবে এবং সেই ভিত্তিতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। প্রয়োজনে আমরা লিখিত অবস্থান দেবো।”
তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন ছয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতির কথা বললেও আলোচনার পূর্বে হঠাৎ করেই খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে—যা ‘একতরফা’ এবং ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এনসিপি ‘র্যাংক চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে জানায়, সাত সদস্যবিশিষ্ট বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাবে তারা একমত। এই কমিটিতে বিচার বিভাগ থেকেও দু’জন সদস্য থাকবেন। এনসিপি চায়, আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হোক।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী এবার একটি রাজনৈতিক বাছাই কমিটি—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি—প্রার্থী বাছাই করবেন। ঐকমত্য না হলে বিচার বিভাগীয় দুই সদস্যসহ মোট সাতজনের ‘র্যাংক চয়েস ভোটিং’ এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি বলেন, “আইনগত কাঠামোর জন্য ‘লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার’ করার প্রস্তাব দিয়েছি। একই সঙ্গে চাইছি, ভবিষ্যতের সরকার যেন এই সংস্কার উপেক্ষা করতে না পারে, তার নিশ্চয়তা।”
জামায়াতের সতর্কতা ও বিকল্প প্রস্তাব
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে—এ বিষয়ে তাদের অবস্থান দৃঢ়। তিনি বলেন, বাছাই কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে ‘র্যাংক চয়েস’ ভোটিং হবে এবং সেখানে বিচারপতিদের অন্তর্ভুক্তি হর্স ট্রেডিং ঠেকাতে সহায়ক হবে।
তবে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন—“এটি অসম্পূর্ণ ও বিপজ্জনক। এটি যদি নমুনা হয়, তবে মন্তব্য জরুরি নয়। কিন্তু এটি যদি চূড়ান্ত হয়, তাহলে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”
জামায়াত আইনি কাঠামো গঠনের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে—অধ্যাদেশের মাধ্যমে কাঠামো গঠন এবং পরে সংসদীয় অনুমোদন অথবা গণভোটের মাধ্যমে জনসমর্থন নিশ্চিতকরণ।
গণসংহতি আন্দোলনের নতুন প্রস্তাব
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা কমিশনের চূড়ান্ত সনদে যুক্ত হওয়া উচিত। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এখনো মতৈক্য হয়নি।
তাদের নতুন প্রস্তাব, ৫ সদস্যের বাছাই কমিটিতে বিচার বিভাগ থেকে একজন প্রতিনিধি রাখা হোক।
নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, “ভূমিকা অংশের কিছু শব্দ ও ভাষা সংশোধনের প্রয়োজন আছে। আমাদের মতামত আগামীকাল কমিশনে জমা দেবো।”
এবি পার্টি ও বিএলডিপির পর্যবেক্ষণ
এবি পার্টির প্রধান মুজিবুর রহমান মঞ্জু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার যথাযথ বাস্তবায়নকে গণতন্ত্র রক্ষার প্রধান পূর্বশর্ত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তা ত্রয়োদশ সংশোধনীর একটি গ্রহণযোগ্য রূপ হতে পারে।”
বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, তত্ত্বাবধায়কের বাছাইয়ে গঠিত কমিটি নিয়ে তাদের দল একমত হলেও, প্রার্থীর নাম সংগ্রহের উৎস নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তিনি বলেন, “যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নেই, তাদের থেকে নাম নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী একজনকে চূড়ান্ত করার জন্য ৫ সদস্যের মধ্যে ৪ জনের ঐকমত্য লাগবে—যা বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব। তাই ৩ জনের সম্মতিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিধান রাখা উচিত।
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...