Logo Logo

রাজনৈতিক মেরুকরণের পথে পবিপ্রবি প্রশাসন, শিক্ষকদের পদলালসায় হতাশ শিক্ষার্থীরা


Splash Image

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পর যখন নতুন প্রত্যাশায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে চলার কথা, তখন পুরনো নিয়মেই চলছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)।


বিজ্ঞাপন


ক্ষমতার পালাবদলে কেবল চেয়ারেরই রূপান্তর হয়েছে। আদতে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। শিক্ষকদের মধ্যকার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিযোগিতা হতাশ করেছে শিক্ষার্থীদের। যেখানে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন, সেখানে শিক্ষকরা আছেন পদবি পাওয়া কিংবা না–পাওয়া নিয়ে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায়।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. এবিএম সাইফুল ইসলাম ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা শাখার পরিচালকের পদবি না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তা দেন। পাশাপাশি তিনি প্রশাসনের তীব্র সমালোচনাও করেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশাসন ‘জামায়াতীকরণ’ করেছে— এমন অভিযোগ তোলেন তিনি। তার এই মন্তব্যের পরেই বিশ্ববিদ্যালয় মহলে শুরু হয় আলোচনা–সমালোচনা। প্রশাসন কি তবে শিক্ষার মান নিশ্চিতের চেয়ে বরং বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক মেরুকরণের দিকেই ঝুঁকাচ্ছে— এমন প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার্থীদের মনে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রধান প্রধান পদগুলোতে রাজনৈতিক শিক্ষকদের আধিপত্য রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ পদই বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের দখলে, বাকি ২০ শতাংশ রয়েছে জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের হাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ২৯টি পদের অনুসন্ধানে এমন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়— যেখানে ২৩টি পদে বিএনপিপন্থি ও ৬টি পদে জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের দখলকৃত পদগুলো হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস–চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের ডিন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডিন, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য–১, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য–২, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য–৩, পোস্ট–গ্রাজুয়েট স্টাডিজের ডিন, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক, কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের পরিচালক, পিএসটিইউ ইনোভেশন ডিসেমিনেশন সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক, পরিবহণ কর্মকর্তা, শহিদ জিয়াউর রহমান হল–১-এর প্রভোস্ট, শহীদ জিয়াউর রহমান হল–২-এর প্রভোস্ট, কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট, বিজয় ২৪ হলের প্রভোস্ট, সুলতানা রাজিয়া হলের প্রভোস্ট এবং সৃজনী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক।

অন্যদিকে জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা রয়েছেন— ট্রেজারার, আরটিসির পরিচালক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা শাখার পরিচালক, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডিন, আইসিটি সেলের পরিচালক, এম. কেরামত আলী হলের প্রভোস্ট এবং তাপসী রাবেয়া বসরী হলের প্রভোস্ট হিসেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক মামুন-অর-রশিদ ‘জামায়াতীকরণ’ প্রসঙ্গে বলেন, “ইউট্যাবের কেউ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতীকরণ হচ্ছে— এমন বক্তব্য দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। যদি দিয়ে থাকে, তা কেন দিয়েছে সেটি আলোচনার বিষয়। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থী শিক্ষক ও গ্রীন ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মামুন-উর-রশিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্ত দায়িত্ব ও বিভিন্ন কমিটিতে একটি রাজনৈতিক দলের একচ্ছত্র অংশগ্রহণেই চলছে সামগ্রিক প্রশাসনিক কার্যক্রম। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের বলয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব ও দায়িত্ব বণ্টন হওয়া উচিত যোগ্যতা এবং নৈতিকতার মানদণ্ডে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস–চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি সবসময় চেষ্টা করেছি যোগ্যতম শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে যোগ্যতম জায়গায় পদায়ন করতে। আর এই যোগ্যতার পদায়নই হলো সর্বশেষ ছাত্র–নির্দেশনা শাখার পরিচালকের নিয়োগ। আমার প্রশাসন দল ও আদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে সঠিক ব্যক্তিকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নিয়োগ দেয়— সেটির উদাহরণ হলো সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগ, যেখানে ১৬ জনের মধ্যে বেশিরভাগেরই কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই।”

আপনার নিয়োগকৃত যোগ্য শিক্ষক–কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তো বিভিন্ন সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে— এ প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, “আমার নিয়োগের পর অল্প সময় পেয়েছি সবাইকে বোঝার জন্য। বাইরে থেকে তো আর সবাইকে সমানভাবে চেনা যায় না। কোনো চেয়ারে বসার পরই আসল চরিত্র ফুটে ওঠে। তবে আমার প্রশাসন এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সবসময় ব্যবস্থা নিচ্ছে।”

এসময় তাকে কোনো বিশেষ দলের রাজনৈতিক মেরূকরণ হচ্ছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যে ২৯টি পদের ব্যাপারে প্রশ্ন আছে, সেগুলোর বেশিরভাগই পদায়ন করা হয়েছে আমার নিয়োগের আগে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান প্রোভিসি অধ্যাপক হেমায়েত জাহান। এ ব্যাপারে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...