Logo Logo

নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে খাজুরা আশ্রয়ন প্রকল্প


Splash Image

নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার পথে পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের পশ্চিম খাজুরা গোড়া খাল আশ্রয়ন প্রকল্প। গৃহহীনদের জন্য নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখাতে নির্মিত ঘরবাড়ি আজ নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায়। ঘর পেলেও পাচ্ছে না বসবাসের পরিবেশ। দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন ৭১টি পরিবার। যাদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে নদীর ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে।


বিজ্ঞাপন


সমুদ্রের সাথে লড়াই করে জেলেরা জীবন জীবিকা নির্বাহ করে দেশের সুশীল অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও তাদের অনেকেরই বসবাসের জায়গা নেই। নেই এক খন্ড জমি। যেখানে তারা স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করবে। মারা গেলে মাটি দেয়ার মত জায়গা টুকুও নেই। ঝড় বন্যা মাথায় নিয়ে সমুদ্রে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে।

এক গন্ড জমি, একটি ঘর পেয়ে জেলেরা খুশি হয়েছিল। তাদের সেই খুশি কয়েক বছর যেতে না যেতেই মলিন হতে শুরু করে। আশ্রায়ন প্রকল্পে পাশ দিয়ে বয়ে যাওযা খাপড়াভাঙ্গা নদী দিয়ে দ্রুত গতির ট্রলার সহ নৌযান আসার যাওয়ায় নদীতে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়ে বড় বড় ঢেউ এসে আঁচড়ে পরছে আশ্রয়ন প্রকল্পে। জরাজীর্ণ ঘরে বসবাসরত জেলেদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। সব সময় আতংক নিয়ে বসবাস করতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। এই বুঝি ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। সুখের নীড়ই জেলেদের এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। অভাব অনটন নিয়ে বসবাসরত জেলেদের দু'বেলা দুমুঠো খাবার জোটাতে যেখানে হিমসিম খেতে হচ্ছে, সেখানে ঘর মেরামত তো অনেক দুরের কথা। তাই ভাঙাচোরা ঘরেই বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী জেলেরা এমন অভিযোগ তাদের। তারা এ দেশের নাগরিক কিনা এমন প্রশ্ন এখানকার বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে জানা গেছে,জেলেদের কথা চিন্তা করে বিএনপি সরকার ২০০৫ সালে খাপড়াভাঙ্গা নদীর কোল ঘেষে ৮০ পরিবারের জন্য গড়ে তোলেন একটি আশ্রয়ন প্রকল্প।যেখানে জেলেদের সুখে শান্তিতে বসবাস করার কথা। কিন্তু বসবাসের দুই বছরের মাথায় ভয়াল সিডর তাদের সেই সুখের নীড়ে হানা দেয়। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশ্রয়ন প্রকল্পটি। এরপর দীর্ঘ বছর চলে গেলেও মেরামত বা সংস্কার হয়নি।ইতিমধ্যে অন্যত্র চলে গেছে ৯টি পরিবার। এরই মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে আরেক বিপদ। নদী গর্ভে বিলীন বিলীন হবার আশংকায় আশ্রয়নটি। নদী ভাঙ্গন রোধে এবং আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্থারের দাবি জানিয়ে আসলেও সারা দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ আশ্রয়নের বাসিন্দা লাইলী বেগম বলেন, 'আমরা যেই ঘরে বসবাস করছি সেই ঘর মানুষ তো দূরের কথা গরু-মহিষও থাকার উপযোগী না।' প্রতিটি ঘরের টিন ক্ষয়ে পরছে। ঘরের দরজা জানালা, বেড়া নেই। ঘরে বসেই আমরা আকাশ দেখি। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরের ভিতরে পানি পরছে। কোন মতে পলিথিন ও তেরপাল দিয়ে বসবাস করছি। এ ঘরে কোন মানুষ থাকতে পারে না।

কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি সভাপতি রুহুল আমিন মাঝি বলেন, আশ্রয়নের লোকজন বিষয়টি আমাদের অবহিত করার পর স্থানীয় ট্রলারগুলো আস্তে চালায়। কিন্তু দূর দূরান্তের ট্রলারগুলো দ্রুত চালাচ্ছে। যার কারণে আশ্রায়ন এলাকার ভাঙ্গন কমছে না।

এ বিষয়ে লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, বিষয়টি আমাকে আশ্রয়নের লোকজন অবহিত করেছে। আগামী দু'একদিনের মধ্যে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী ভাঙ্গন রোধ হবে। জরাজীর্ণ আশ্রয়ন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা এবং পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ইয়াসীন সাদেক বলেন, 'বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। জরাজীর্ণ আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামতের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করব। নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাথে বসে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিবেদক - জাকারিয়া জাহিদ, কলাপাড়া, পটুয়াখালী।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...