Logo Logo

নেপালে কী রাজতন্ত্র ফিরছে?


Splash Image

ছবি : সংগৃহীত।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় আবারও উচ্চারিত হচ্ছে পুরোনো এক স্লোগান— “রাজা ফিরবেনই”। জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে গণতন্ত্রের ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনের প্রথম দুই দিনেই হাজারো মানুষ সাবেক নেপাল রাজ্যের পতাকার নিচে সমবেত হয়ে রাজতন্ত্রপন্থী স্লোগান দেন।


বিজ্ঞাপন


বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, স্থবির অর্থনীতি এবং নির্বাচিত সরকারগুলোর পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় না থাকার কারণে জনঅসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে। ১৭ বছরে ১৪টি সরকার পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা মানুষকে আবারও রাজতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট করছে।

সমর্থকদের মতে, রাজতন্ত্রের দাবি কেবল রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, বরং একধরনের আধ্যাত্মিক জাগরণ—যা প্রজাতন্ত্রের বিশৃঙ্খলার বিপরীতে শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, হিন্দু গৌরব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি বহন করে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভেতরকার দুর্নীতি ও দলীয় স্বার্থ যদি অক্ষুণ্ণ থাকে, তবে প্রতীকী রাজা ফিরলেও বাস্তব কোনো পরিবর্তন আসবে না।

শাহ রাজবংশের ইতিহাস শুরু হয় ১৫৫৯ সালে দ্রব্য শাহের হাত ধরে। তার উত্তরসূরি পৃথী নারায়ণ শাহ ১৭৪৩ সালে ছিন্নভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলগুলোকে একত্রিত করে আধুনিক নেপালের ভিত্তি গড়েন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুদ্ধ, চুক্তি ও সামন্ততান্ত্রিক শাসনের মধ্য দিয়েই টিকে থাকে রাজতন্ত্র।

তবে ২০০১ সালের নারায়ণহিতি প্রাসাদ হত্যাকাণ্ড রাজতন্ত্রের পতনের সূচনা ঘটায়। রাজা বীরেন্দ্র ও রাজপরিবারের বেশিরভাগ সদস্য নিহত হওয়ার পর ক্ষমতায় আসা রাজা জ্ঞানেন্দ্র কঠোর শাসন আরোপ করলেও, মাওবাদী বিদ্রোহ ও গণআন্দোলনের মুখে ২০০৬ সালে তাকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।

২০০৮ সালের ২৮ মে নেপাল আনুষ্ঠানিকভাবে ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে। ২৩৯ বছরের শাহ রাজবংশের শাসনের অবসান ঘটে, এবং রাজতন্ত্রের মুকুট চিরতরে বিদায় নেয়।

২০২৫ সালের মার্চে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সড়কে নামেন। পুলিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ ঘটলেও রাজতন্ত্রের প্রতীকগুলো অক্ষত থাকে।

তবে জেন-জি প্রজন্মের নেতাদের মতে, তাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য রাজতন্ত্র নয়, বরং নেপালের ভবিষ্যৎ। তারা বলছেন, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দুর্নীতি ও বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপই তাদের আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি। তাদের কাছে রাজতন্ত্রে ফিরে যাওয়া মানে এক পশ্চাৎপদ পদক্ষেপ।

বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, রাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়লেও তা সীমিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি মূলত বর্তমান নেতাদের প্রতি ক্ষোভ থেকে উৎসারিত; প্রকৃত রাজতন্ত্রপ্রেম থেকে নয়।

নেপালের রাজনীতি এখন এক সন্ধিক্ষণে। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—প্রজাতন্ত্রের ব্যর্থতার মধ্যে কি রাজতন্ত্র আবারও ফিরে আসবে, নাকি নতুন প্রজন্মের আন্দোলন দেশকে অন্য কোনো পথে নিয়ে যাবে?

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...