বিজ্ঞাপন
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পৃথক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এর আগে রোববার একই কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। পরে জানা যায়, এই চার দলের সঙ্গে নতুন করে আরও তিনটি দল যুক্ত হতে যাচ্ছে। এগুলো হলো নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নিজ নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই তিন দলও কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেবে বলে দলের নেতারা নিশ্চিত করেছেন।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে নির্বাচন আয়োজন, জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রতিটি দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা, বিগত ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার, এবং স্বৈরাচারের সহায়ক হিসেবে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতেই এই কর্মসূচি।
ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায়, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরগুলোতে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, চার ইসলামী দলের যুগপৎ কর্মসূচি নির্বাচনী রাজনীতির নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতা বা বোঝাপড়ার আভাসও মিলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে আটটি দল এই যুগপৎ কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে একমত হলেও শেষ মুহূর্তে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং গণ অধিকার পরিষদ এতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জনগণের দাবি আদায়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ।” খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকার যদি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে ব্যর্থ হয়, তবে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম বলেন, “কেবল নির্বাচন নয়, জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল দেশকে ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে রক্ষা করা। সংস্কার ও বিচারকে উপেক্ষা করে নির্বাচনকেই মুখ্য করলে তা অশুভ বন্দোবস্তে দেশকে ঠেলে দেবে।”
জামায়াত ও অন্য দলগুলোর নেতারা অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর এই অভিযোগ জোরালো হয়েছে। তাঁদের দাবি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকেও এই যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, সমঝোতা ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অবরোধের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ইসলামপন্থীদের ভোট একত্রে আনার তৎপরতা চালাচ্ছেন চরমোনাই পীর। এই উদ্যোগে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা মামুনুল হকও যুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় যুগপৎ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইসলামপন্থী এই নতুন আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...