বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় এখন অহেতুক টেস্টের বোঝা রোগীদের জন্য এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। রোগী সামান্য জ্বর বা অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেই শুরু হয় নানারকম টেস্টের পরামর্শ। অনেক চিকিৎসক রোগীর পুরো সমস্যাই মনোযোগ দিয়ে শোনেন না, বরং প্রথমেই ধরিয়ে দেন একের পর এক ব্যয়বহুল পরীক্ষা।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরেজমিনে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ রোগী এবং তাদের স্বজনরা ডাক্তারদের এই অযৌক্তিক টেস্ট দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
সরকারি হাসপাতাল থাকলেও গরিব রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পান না। অধিকাংশ ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার সময় না দিয়ে নিজেদের প্রাইভেট চেম্বার বা হাসপাতালে পাঠান। সেখানে রোগীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণও হারাতে হয় রোগীদের।
অনেক রোগী অভিযোগ করেছেন, কিছু ডাক্তার তাদের এমনভাবে ভয় দেখান যে রোগীর অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়। অনেকে আবার এমন আচরণ করেন যেন তারা দায়িত্বে নয়, ব্যবসায়িক লেনদেনে এসেছেন। এভাবে চিকিৎসার নামে চলছে বাণিজ্য, যেখানে মূল লক্ষ্য হচ্ছে অর্থ উপার্জন, রোগীর সেবা নয়।
মফস্বল শহরে চিকিৎসকের ফিও হু হু করে বাড়ছে। যেখানে দুই বছর আগে ফি ছিল ৫০০ টাকা, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে তা হাজার টাকায় পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। অথচ কয়েক মিনিটের সাক্ষাতেই ডাক্তাররা রোগীকে নানা টেস্ট করিয়ে দেন, কিন্তু রোগীর সমস্যার সঠিক সমাধান মেলে না।
গ্রামীণ পর্যায়ের হাতুড়ি মার্কা ডাক্তারদের প্রসঙ্গ টেনে স্থানীয়রা বলছেন, তারা অন্তত রোগীর অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন এবং প্রয়োজনে শহরে পাঠান। অথচ বড় ডাক্তাররা রোগীর কথা না শুনেই মেশিননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকে পড়ছেন।
অহেতুক টেস্টের চাপে সাধারণ মানুষের ওষুধ কেনার মতো অর্থও থাকে না। শেষমেশ চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালে বেডে কষ্টে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয় অসংখ্য মানুষকে।
সাধারণ মানুষ মনে করছেন, স্বাস্থ্য খাতের এই অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় চিকিৎসার নামে বাণিজ্যিক শোষণ আরও বেড়ে যাবে, আর নিঃস্ব হতে থাকবে সাধারণ মানুষ।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...