বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলছেন, ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মূল কারণ দায়িত্বশীল প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং জনসচেতনতার অভাব। পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বছরের পর বছর বংশ বিস্তার করতে পারে। ডেঙ্গু শনাক্ত করতে এনএস-১ এবং সিবিসি পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে গ্রামাঞ্চলে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, যেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি প্রাথমিকভাবে জ্বর কমে যাওয়ায় সুস্থ ভাবেন, কিন্তু ভাইরাস তখন নীরবে শক্তি সঞ্চয় করে। পরে প্রচণ্ড জ্বর, শরীর ব্যথা, রক্তক্ষরণসহ জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সময়মতো চিকিত্সা নিলে রোগী সুস্থ হয়, বিলম্ব হলে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু জ্বরে ৩০৭ জন মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৫,৯২৬ জন। তবে সরকারী হাসপাতাল ও নির্দিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, সিংহভাগ বেসরকারি হাসপাতাল তথ্য দেয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি হতে পারে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শুধুমাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সিটি করপোরেশন নয়। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনও এ কাজে সম্পৃক্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটি গঠন করা জরুরি। এ কমিটি মশা নিধন ও চিকিত্সাসেবা, জনসচেতনতা এবং অন্যান্য কার্যক্রমে সমন্বয় করবে।
এডিস মশার দুটি প্রকার রয়েছে—এডিস এলবোপিকটাস (জঙ্গলে) ও এডিস ইজিপটাই (শহর ও গ্রামে)। বরগুনার সাম্প্রতিক জরিপে এডিস মশার ঘনত্ব শহরে ৪৭.১০, গ্রামে ১৬৩.৪ সূচকে পৌঁছেছে। সাধারণ সূচকের মান ২০ হলেই মশার ভয়াবহতা ধরা হয়। এতে বোঝা যায়, গ্রামে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব ভয়ঙ্কর।
ঢাকা মেডিক্যালসহ অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে রোগী চাপ বাড়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়ছে। হাসপাতালে জনবল কম থাকায় ডাক্তার ও নার্সদের অতিরিক্ত চাপ মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নির্ধারিত পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা এবং এডিস মশা নিধন ছাড়া নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
আইইডিসিআর-এর একজন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, আধুনিক প্লাস্টিক সামগ্রীতে জমে থাকা পানি এডিস মশার বংশ বিস্তারে সহায়তা করছে। জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিত্সা প্রতিশ্রুতি (নিপসম)-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্থায়ীভাবে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি।
চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, জ্বর কমলেও ডেঙ্গুর ঝুঁকি থাকে। প্যারাসিটামল খাবার পাশাপাশি ডেঙ্গুর পরীক্ষাসমূহ অবশ্যই করতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন জানিয়েছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে লার্ভাসাইটিং ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সফি আহমেদ মোয়াজ বলেন, এ বছর শিশুদের আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিলম্বে চিকিত্সার কারণে শিশুদের মধ্যে শক সিনড্রোমের মাধ্যমে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, চিকিত্সা ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করলে উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়েই পরীক্ষা ও চিকিৎসা সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন, জনসচেতনতা, পরীক্ষা ও চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণসহ আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত কার্যক্রম কার্যকরভাবে চালানো প্রয়োজন।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...