Logo Logo

৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করার দিন : তারেক রহমান


Splash Image

ফাইল ছবি।

“আমি যেভাবে দেখি, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করার দিন।” ঐতিহাসিক এই দিবসকে স্মরণ করে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীতে আয়োজিত “সিপাহী-জনতার বিপ্লব দিবস” উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর ছিল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।

বক্তব্যের শুরুতে তারেক রহমান বলেন, “অতীত নিয়ে সবসময় পড়ে থাকলে এক চোখ অন্ধ, অতীতকে ভুলে গেলে দু’চোখই অন্ধ। ইতিহাসকে পরিত্যাগ করা যেমন বিপজ্জনক, তেমনি ইতিহাসের শিক্ষা ভুলে যাওয়াও ভয়াবহ ভুল।”

তিনি আরও বলেন, “যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল, সেনাবাহিনীর সম্মান ও সাহসকে ভুলুন্ঠিত করতে চেয়েছিল, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশপ্রেমিক সিপাহী-জনতার বিপ্লবে তাদের পরাজয় ঘটেছিল। কিন্তু সেই পরাজিত অপশক্তি পরবর্তীতে মহাজোটের নামে পুনরায় একজোট হয়ে দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে, বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল।”

তিনি দাবি করেন, “দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০২৪ সালে জনগণের গণঅভ্যুত্থানে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। বিএনপি মনে করে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের, আর ২০২৪ ছিল স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “আমাদের এবারের ৭ নভেম্বরের অঙ্গীকার—দেশকে যেন আর কখনো তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা না যায়। এর জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের চেতনা ধারণ করেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”

তিনি ইতিহাসের বিভিন্ন আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৯০ কিংবা ২০২৪—প্রতিটি আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই ছিল, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এখনও প্রশ্ন থেকে যায়, রাজনীতি আসলে কাদের জন্য?”

তারেক রহমান বলেন, “বর্তমান দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি না দিয়ে বরং আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জনগণের মুখোমুখি হওয়া উচিত। রাজনীতি কেবল দলীয় সমর্থকদের জন্য নয়, দেশের লাখো নির্দলীয় জনগণের প্রত্যাশা পূরণেও দায়বদ্ধ।”

তিনি সমালোচনা করে বলেন, “মাসের পর মাস রাজনৈতিক নেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন, কিন্তু কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারী নিরাপত্তা কিংবা সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। অথচ গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু।”

কৃষক, শ্রমিক ও বেকারদের দুরবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এবার দেশে ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণ ব্যয়সহ প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে ২৫–২৭ টাকা, অথচ বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে। কৃষকরা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে। অথচ রাষ্ট্র ‘গণভোট’-এ একই অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে চাইছে। কৃষকের কাছে আলুর ন্যায্য মূল্য গণভোটের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি পেঁয়াজ উৎপাদন প্রসঙ্গেও বলেন, “দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছর আমদানিনির্ভর হতে হয়। গণভোটের ব্যয় দিয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপনই বেশি দরকার।”

নারী কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশে এখন ২ কোটিরও বেশি কর্মজীবী নারী রয়েছেন। নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর সিদ্ধান্ত কৌশলে চাকরি হারানোর আতঙ্ক তৈরি করছে। যখন বেকারত্ব বাড়ছে, তখন গণভোট নয়, নারীদের চাকরি নিরাপত্তাই বেশি প্রয়োজন।”

একইসঙ্গে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, “দেশে দারিদ্র্যের হার ২৮ শতাংশ, আরও ১৮ শতাংশ মানুষ যেকোনো সময় দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে। উচ্চশিক্ষিত প্রতি পাঁচজনের একজন বেকার। গত ১৪ মাসে ৩৫৩টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে এক লাখের বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন। তাদের জন্য একটি চাকরিই গণভোটের চেয়ে বেশি জরুরি।”

শিক্ষা ও অর্থনীতির সংকট নিয়ে তারেক রহমান বলেন, “২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার সর্বনিম্ন, ২০২টি প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করতে পারেনি। ইংরেজি ও আইসিটিতে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য। এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গভীর সংকটের ইঙ্গিত। শিক্ষা সংস্কারের জায়গায় গণভোট নিয়ে গবেষণা করা অর্থহীন।”

অর্থনীতি নিয়ে তিনি বলেন, “দেশের ব্যাংক খাত এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখন ৪ শতাংশেরও নিচে। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার হস্তান্তরের সময় এটি ছিল ৭.৬ শতাংশ। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স এখনো দেশের ভরসা হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে বাধা দিচ্ছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “কিছু রাজনৈতিক দল শর্ত জুড়ে দিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাচ্ছে, যা আসলে পরাজিত স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের পথ তৈরি করছে। রাজধানীতে সাম্প্রতিক আগুন সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির জন্য সতর্কবার্তা।”

বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন, “গণভোটের আড়ালে পতিত পলাতক স্বৈরাচারকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কিনা, সেদিকে গণতন্ত্রকামী জনগণকে নজর রাখতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হলো ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা, কোনো দলের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন নয়।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “সংবিধানে ‘ডেমোক্রেটিক’ লেখা থাকলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। দরকার মানসিকতার পরিবর্তন, দেশপ্রেম, রাজনৈতিক সহনশীলতা ও জাতীয় ঐক্য।”

বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখতে বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে, এটি প্রমাণিত সত্য। আমরা জুলাই সনদের অঙ্গীকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কেউ যদি অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল ভেবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে, সেটি শেষ পর্যন্ত তাদের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

তিনি বক্তব্য শেষ করেন স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের উক্তি উদ্ধৃত করে— “জাতীয় ঐক্য আমাদের শক্তি, বিভাজন আমাদের দুর্বলতা।” এবং শেষে স্লোগান উচ্চারণ করেন— “দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ—সবার আগে বাংলাদেশ।”

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...