বিজ্ঞাপন
কোটালীপাড়া উপজেলায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা এখন নিজ বাড়ির আঙিনায় বা অনাবাদী জমিতে ১৩ প্রকার শাক-সবজি চাষ করছেন। দেড় শতাংশের পারিবারিক পুষ্টিবাগান থেকে বছরে উৎপাদিত ৫৫০ কেজি শাক-সবজির বিক্রয় মূল্য দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৫শ’ টাকা। এ উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র ৩ হাজার ৫শ’ টাকা। ফলস্বরূপ, পরিবারের খাদ্যতালিকায় শাক-সবজির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে পরিবারের ৬০% পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় জানান, চলতি অর্থ বছরে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ৩৭১টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনের উপকরণ, ১৩ প্রকার শাক-সবজির বীজ ও জৈব সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মুক্তা মন্ডল বলেন, "পারিবারিক পুষ্টিবাগানের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পরিবারের জন্য সারাবছর তাজা, নিরাপদ ও পুষ্টিকর শাকসবজি ও ফলমূল সরবরাহ নিশ্চিত করা। এটি পরিবারকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও অন্যান্য পুষ্টি দেয়। পাশাপাশি অব্যবহৃত জমি কাজে লাগানো, কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরিবারের আয় বৃদ্ধিতেও সহায়তা করছে। বাগানের অতিরিক্ত উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে পরিবারের আয় বেড়ে যাচ্ছে।"
কৃষক ইসমাইল হাওলাদার জানান, "মাত্র দেড় শতাংশ জমিতে সারাবছর শাক-সবজি ফলাচ্ছি। উৎপাদিত শাকসবজি নিজের খাচ্ছি, বাকি বিক্রি করি। এতে বছরে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বাড়তি আয় হচ্ছে। এত অল্প জমিতে ১৩ প্রকার ফসল চাষ করে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি।"
কুশলা ইউনিয়নের কৃষক মিলন শেখ বলেন, "এ চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করি না। জৈব সার ও জৈববালাইনাশক ব্যবহার করি। তাই বাগানের সবজি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত।"
হিরণ ইউনিয়নের কৃষক মাসুদ দাড়িয়া জানান, "আমার বাগানের সবজি বিষমুক্ত এবং সুস্বাদু। বাজারে আমরা এগুলো একটু বেশি দামে বিক্রি করতে পারি।"
মান্দ্রা চৌরখুলি গ্রামের কৃষাণী হাসি বেগম বলেন, "গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি বাগানের শাক-সবজি রোপণ ও পরিচর্যা করি। ৪৫–৫০% সবজি আমরা খাই, বাকি বিক্রি করি। এতে সংসারের অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হচ্ছে এবং আয়ের পথ সুগম হয়েছে।"
কোটালীপাড়া উপজেলায় গত ছয় বছর ধরে পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্প চালু রয়েছে। কৃষকরা এ উদ্যোগকে শুধু পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধির উৎস হিসেবেই নয়, বরং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ ও খাদ্য নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...