Logo Logo

সিলেটে আইডিয়া অফিসে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভোটার শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় কেসকেড প্রশিক্ষণের আয়োজন


Splash Image

এরপর পরিচিতি পর্বে প্রত্যেকে নিজ নিজ নাম, ঠিকানা এবং কমিউনিটির পরিচয় তুলে ধরেন, যা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়া তৈরিতে সহায়তা করে।


বিজ্ঞাপন


১৭ নভেম্বর ২০২৫, রোজ সোমবার সকাল ৯.০০ টায় আইডিয়া, সিলেট অফিস উপশহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভোটার শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয় ক্যাসকেইড প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, যেমন পাত্র, মুনিপুরী, ধর্মীয় সংখালুগু, এবং চা শ্রমিক মহিলা । মোট ১৫ জন প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করেন। সবার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পরে প্রশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বর্ননা করে সেশন শুরু করেন। তিনি কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি সারা দিনের কার্যক্রম সম্পর্কে আগাম অবহিত করেন।

এরপর পরিচিতি পর্বে প্রত্যেকে নিজ নিজ নাম, ঠিকানা এবং কমিউনিটির পরিচয় তুলে ধরেন, যা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়া তৈরিতে সহায়তা করে।

পরিচিতি পর্ব শেষ হওয়ার পর জনাব আজাদ প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন এবং অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা কী হতে পারে তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে ভোটার এডুকেশন কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করতে হলে এই প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এরপর প্রশিক্ষক সালাউদ্দিন প্রশিক্ষণের অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যাশা জানার জন্য প্রত্যেককে একটি ভিপ কার্ড দেন এবং সেখানে আজকের প্রশিক্ষণ থেকে তারা কী শিখতে চান তা লিখে দিতে বলেন। সবার অবদানের মাধ্যমে ট্রেনিংয়ের প্রাথমিক প্রত্যাশা যাচাই করেন।

১৫ মিনিটের চা বিরতির পর পুনরায় সেশন শুরু হলে প্রশিক্ষক সালাউদ্দিন, কার্যকর ফ্যাসিলিটেশন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি ফ্যাসিলিটেটরের ব্যক্তিগত গুণাবলি, আচরণ, উপস্থাপন দক্ষতা, অংশগ্রহণকারীদের সম্পৃক্ত করার কৌশল এবং সফল ফ্যাসিলিটেশনের বাস্তব দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উদাহরণ জানতে চাইলে অংশগ্রহণকারীরা তাদের কমিউনিটিতে প্রচলিত পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কথা উল্লেখ করেন, যা তাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

এরপর এ কে আজাদ নির্বাচন বিষয়ক সেশন পরিচালনা করেন। তিনি নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন যে নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড। তিনি ব্যালট পেপার প্রদর্শন করেন, সংসদ ভবনের ছবি দেখান এবং ভোটের মাধ্যমে কীভাবে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেন।

তারপরের সেশনে No One Left Behind শিরোনামে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভোটার এডুকেশন নিয়ে আলোচনা করেন সালাউদ্দিন । রোল প্লের মাধ্যমে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ভোটে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হয়, যাতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ না পড়ে।

পরবর্তীতে প্রশিক্ষক মেহেদী হাসান সৈকত উঠান বৈঠক বিষয়ে সেশন পরিচালনা করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন — উঠান বৈঠক কী, কেন এই ফরম্যাটটি মাঠপর্যায়ের সচেতনতা কার্যক্রমে কার্যকর, এবং কিভাবে একটি উঠান বৈঠক পরিচালনা করতে হয়। এরপর তিনি “স্বাগত বক্তব্য, পরিচিতি, ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্য, গণতন্ত্র ও নির্বাচন, ভোটের গুরুত্ব, ভোটে গেলে/না গেলে এর প্রভাব, গুজব সম্পর্কে সতর্কতা, ভোটের প্রস্তুতি” — এসব বিষয় রোল প্লের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। এই অংশটি অংশগ্রহণকারীদের জন্য অত্যন্ত স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত হয়ে ওঠে।

রোল প্লের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারী পিন্টু জানতে চান—“নেতারা ভোটের পর আর দেখা যায় না, তাহলে কেন ভোট দেব?” উত্তরে সৈকত ব্যাখ্যা করেন যে কাউকে জোর করে ভোটে আনা যায় না, তবে নিজের অধিকার বজায় রাখার, জবাবদিহি নিশ্চিত করার এবং যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্য ভোট দেওয়াই একমাত্র সঠিক পদ্ধতি।

এরপর অংশগ্রহণকারীদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয় এবং প্রতিটি গ্রুপ থেকে দুইজন করে ফ্যাসিলিটেটর নির্বাচন করা হয়। গ্রুপগুলো তাদের আলোচনার বিষয় হিসেবে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোটের গুরুত্ব, অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ও ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করে। প্রতিটি গ্রুপ ইন্টারেক্টিভ আলোচনার মাধ্যমে তাদের শেখা বিষয় উপস্থাপন করে এবং স্লোগানের মাধ্যমে সেশন শেষ করে।

দুপুরের খাবার বিরতির পর “ভাবিয়া করিও শেয়ার” নাটক প্রদর্শন করা হয়, যাতে দেখানো হয় গুজব কীভাবে ছড়ায় এবং গুজব ভোটের পরিবেশকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে। নাটকটির একটি ডেমোস্ট্রেশন দেখানোর পর অংশগ্রহণকারীদের দুইটি গ্রুপে ভাগ করে একই নাটক পরিবেশন করতে দেওয়া হয়। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নাটকটি উপস্থাপন করেন এবং গুজবের ক্ষতিকর দিকগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হন।

এরপর প্রশিক্ষণের প্রধান আকর্ষণ মক ভোটিং অনুশীলনের আয়োজন করা হয়। বাস্তব ভোটকেন্দ্রের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করে বিভিন্ন ভূমিকা নির্ধারণ করা হয় — নিরাপত্তাকর্মী, পোলিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, এজেন্ট, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক এবং ভোটার। পুরো প্রক্রিয়াটি সালাউদ্দিন, একে আজাদ ও মেহেদী হাসান সৈকত ফ্যাসিলিটেট করেন। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের ভূমিকা পালন করে ভোটদানের প্রত্যেক ধাপ বাস্তবভাবে দেখতে পারেন, যা তাদের বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। অংশ গ্রহণকারীরা বলেন বিশেষ করে যাঁরা নতুন ভোটার তাদের জন্য অনেক কর্যকর হবে।

মক ভোটিংয়ের শেষে এ কে আজাদ সারা দিনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এবং প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর সক্রিয় ভূমিকার আশা ব্যক্ত করেন। অংশগ্রহণকারী পিন্টু দাশ জানান যে তিনি এই ট্রেনিং থেকে বহু নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন এবং এটি তার কাছে অত্যন্ত কার্যকর মনে হয়েছে। চা শ্রমিক কমিউনিটির এক নারী প্রতিনিধি জানান যে পুরো ভোটিং প্রক্রিয়াটি কাছ থেকে দেখে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন, যা ভবিষ্যতে তার কমিউনিটিতে কাজ করতে সহায়তা করবে।

সমাপনী অধিবেশনে আইডিয়ার নির্বাহী পরিচালক, জনাব নাজমুল হক বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে গণতন্ত্রে নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। চা শ্রমিক কমিউনিটির ভোটাধিকার অর্জনের ইতিহাস তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, দেশের স্বাধীনতার আগে চা শ্রমিকরা ভোট দিতে পারতেন না, পরবর্তীতে তারা ভোটের অধিকার পেলেও অংশগ্রহণ সবসময় নিশ্চিত ছিল না। তাই এখনো তাদের সচেতন করা এবং ভোটে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি অংশগ্রহণকারীদের তাদের নিজ নিজ কমিউনিটিতে এই সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...