নিহত এনামুল শেখ ও আনিস শেখ।
বিজ্ঞাপন
গত ১৩ নভেম্বর রাতে লিবিয়ার আল-খুমস উপকূলে দুটি নৌকা ডুবে যায়। এর একটিতে ছিলেন বাংলাদেশের ২৬ জন নাগরিক। উদ্ধারকর্মীরা চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়নের পশ্চিম লখন্ডা গ্রাম থেকেই ছয়জন এবং পাশ্ববর্তী গুনহার গ্রাম থেকে একজন ছিলেন।
নিহতরা হলেন— পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের ইয়াকুব আলী শেখের ছেলে এনামুল শেখ (২৭) ও একই গ্রামের এবং ননীক্ষীর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জাহিদ আলী শেখের ছেলে আনিস শেখ (৩৫)।
নিখোঁজ রয়েছেন— ইব্রাহিম শেখ (পশ্চিম লখন্ডা), হাবিবুল্লাহ মোল্লা সোহেল (পশ্চিম লখন্ডা), আশিক মিনা (পশ্চিম লখন্ডা), দুলাল মিনা (পশ্চিম লখন্ডা) ও নিয়াজ মিনা (গুনহার গ্রাম)।
পরিবারগুলোর দাবি, দালালদের মাধ্যমে প্রত্যেকে প্রায় ২১ লাখ টাকা খরচ করে গত অক্টোবর মাসে ইতালির উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে লিবিয়া যান এই সাত যুবক।
নৌকা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের আবুল শেখ ধলা (৩০) ১৬ নভেম্বর ভিডিও কলের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের জানান, “আমাদের নৌকার ঠিক মাঝ বরাবর আরেকটি নৌকা উঠে যায়। মাঝখানে যারা ছিল, তারা সবাই মারা গেছে—সেখানেই ছিল এনামুল আর আনিস। আমি পিছনে ছিলাম, আমরা কেউ কেউ আঘাত পেয়ে সাগরে ভেসে যাই। পরে লাইফ জ্যাকেট থাকা কিছু লোককে উদ্ধার করা হয়। আমাকে উদ্ধার করেছে সবশেষে।”
এনামুল শেখ ছিলেন আবুল শেখ ধলার আপন চাচাতো ভাই।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পশ্চিম লখন্ডা ও গুনহার গ্রামে নেমে আসে শোকের মাতম। বিশেষ করে কয়েক বছর ধরে দালালচক্রের সক্রিয়তার কারণে এলাকায় ক্ষোভ বাড়ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দালালরা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অসহায় মানুষকে অবৈধভাবে ইতালি পাঠাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও দালালচক্রকে থামানোর কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না।
ননীক্ষীর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলমগীর মোল্যা বলেন, “লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে যুবকদের। পরিবারের লোকজন ধার-দেনা করে দালালদের হাতেই সব টাকা তুলে দিচ্ছে। অবৈধ সমুদ্রপথ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, তবুও বেকারত্বের কারণে অনেকেই বাধ্য হচ্ছে। এ যাত্রায় শুধু আমার ওয়ার্ড থেকেই সাতজন লিবিয়া গেছেন।”
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, “নিহত দুইজন ও নিখোঁজদের বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি পাঠানো হয়েছে।”
গোপালগঞ্জ জেলা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ষষ্টীপদ রায় বলেন, “সরকার বৈধ অভিবাসন পথ উন্মুক্ত করেছে। সরকারিভাবেই ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়া সম্ভব। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আমরা নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি। তারপরও মানুষ অবৈধ পথে যাচ্ছে, মৃত্যুও ঘটছে—এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে জানানো হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজালাল মিয়া ও ইমাম হোসেন বলেন, দালালচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং বৈধ অভিবাসনের সুযোগ আরও বৃদ্ধি না করলে এ ধরনের মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...