বিজ্ঞাপন
ফিলিপাইনের রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের আনাচে-কানাচে শুরু হয় আনন্দ উল্লাস। বাংলাদেশের একমাত্র গোলদাতা মোরসালিনের জন্ম ২০০৫ সালের ২৫ নভেম্বর ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের বিএস ডাঙ্গী গ্রামে। বাবা শেখ মজিবর সৌদি আরবে কর্মসূত্রে প্রবাসী। মায়ের স্নেহ ও নানাবাড়ির উঠোনে কাটে তার শৈশব। দাদাবাড়ি ছবুল্যা মাতুব্বরের ডাঙ্গীতে, নানার নাম শেখ আলাউদ্দিন, স্বভাব সরল ও পেশায় ব্যবসায়ী।
মোরসালিনের ছোট ভাই মুস্তাকিম বর্তমানে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। মোরসালিনের ফুটবলের যাত্রা শুরু হয় গ্রামের আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। ক্লাস শেষে সে বল নিয়ে মাঠে দৌড়াত। মা শেফালী বেগম জানালেন, “ও যেন বল নিয়েই জন্মেছে। বকাঝকা করতাম, পড়াশোনা করতে বলতাম, কিন্তু মাঠের ডাক সে কখনো অমান্য করেনি।”
২০১৫ সালে মামা সোবহান প্রামাণিক মোরসালিনকে ফরিদপুরের একটি বাছাইতে নিয়ে যান। ১০–১৩ বছরের ছোট ছেলেটি সেখানে সাফল্য পেয়ে ২০১৬ সালে ঢাকার বিকেএসপিতে সুযোগ পান। মামা সোবাহান নিজেও ফুটবলার ছিলেন, কিন্তু বড় পরিসরে যেতে পারেননি। তাই মোরসালিনের প্রতি তার আকর্ষণ আরও বেশি। মামা বলেন, “খেলায় হার–জিত আছে, কিন্তু তার চোখের আগুন অন্য কারো চোখে পাইনি। তাই তাকে সুযোগ দেওয়াই স্বাভাবিক।”
দাদা নানা আলাউদ্দিন স্মৃতি ভাগ করে বলেন, “ওর বয়স যখন তিন, তাকে ১০০ টাকা দিলেও নিত না। কিন্তু দোয়েল আঁকা দুই টাকার নোট পেলে মুখ হাসিতে ভরে যেত। সেই হাসিই আজও আছে, শুধু লক্ষ্য বড় হয়েছে।”
কৈশোরে মোরসালিন খেলতেন চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ মাঠে এবং স্থানীয় স্পোর্টিং ক্লাবেও। ক্লাব সভাপতি নাজমুল হুদা জানান, “তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন অনেক শিশু-কিশোর ফুটবলের দিকে ফিরে এসেছে। সে চরভদ্রাসনের গর্ব।”
মা শেফালী বেগমও এখন ছেলেকে উৎসাহ দেন, “মানুষ তোমাকে ভালোবাসে। এই ভালোবাসা ধরে রেখে এগিয়ে যাও। ফুটবলের মাঠে দেশকে তুলে ধরো।”
মোরসালিন গোলের কৃতিত্ব দিয়েছেন রাকিব হোসেনকে, “আমি শুধু পা ছুঁয়েছি, এই গোলের শতভাগ অবদান রাকিব ভাইয়ের। অসাধারণ বল দিয়েছিলেন তিনি, আমার চেয়ে তার কৃতিত্বই বেশি।”
২০২৫ সালের এই দিনটি বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লেখা থাকবে। তরুণ মোরসালিনের এই গোল শুধু মাঠের জয় নয়, দেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...