Logo Logo

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ববি প্রশাসনের দায়সারা মামলা, দেড় বছরেও অগ্রগতি নেই


Splash Image

জুলাই আন্দোলনের প্রায় দেড় বছর পার হলেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রশাসন।


বিজ্ঞাপন


শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের প্রশাসন আন্দোলনের মুখে একটি দায়সারা মামলা দায়ের করেছিল। তবে সেই মামলা কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি নেই।

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম দায়িত্ব নেওয়ার পরও পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয়নি। নামমাত্র তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কার্যত সেটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসন শুধু মামলা দায়ের করে দায় সেরেছে। হামলাকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাডেমিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিচার না হওয়ায় তারা এখন ক্যাম্পাসে অবাধে চলাফেরা করছে এবং ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে গোপন বৈঠক করছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সামনে ‘মুলা’ ঝুলিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে।

তারা আরও অভিযোগ করেন, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে—এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।

মামলার বাদী কে. এম. সানোয়ার পারভেজ লিটন দাবি করেন, তাকে জোরপূর্বক বাদী বানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন এক প্রকার চাপ প্রয়োগ করে আমাকে বাদী বানায় এবং মামলার আগে আমাকে মামলার কপি দেখায়নি। আমি থানায় গিয়ে শুধু স্বাক্ষর করেছি, কিন্তু মূল কাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করেছে। মামলা দায়েরের পর কপি পড়ে দেখি, এখানে একেবারে সাধারণভাবে মামলাটা লেখা হয়েছে।”

তৎকালীন প্রশাসনের প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি মামলার ড্রাফট দেখিনি। এটি করেছে রেজিস্ট্রার অফিস। সাক্ষী সম্পর্কে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।”

তিনি আরও জানান, প্রথম তালিকা থেকে কয়েকজনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তীতে নতুন করে কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বর্তমান প্রশাসনের দাবি, স্বাক্ষীরা উপস্থিত না হওয়ায় মামলা এগোয়নি। তবে কয়েকজন সাক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ করা হয়নি।

মামলার সাক্ষী ও জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির নেত্রী ভূমিকা সরকার বলেন, “মামলার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার থানায় যেতে বলা হয়েছিল, কিন্তু সেটি আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকেই ক্যানসেল করা হয়। এরপর আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। যখন আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বসেছিলাম, তখন দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।”

হামলার ঘটনায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে ওই তালিকায় থাকা তিন শিক্ষার্থী—রিয়াজ উদ্দিন মোল্লা, রুম্মান হোসেন ও সিতাব খান—দাবি করেছেন, ঘটনার সময় তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলেন না। তাদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত আক্রোশে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মামলার আসামি সিতাব খান বলেন, “ঘটনার সময় আমি বরিশালেই ছিলাম না। ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো। একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম তালিকায় যুক্ত করেছে।”

এ বিষয়ে মামলার অন্যতম সাক্ষী মাহমুদুল হাসান তমাল বলেন, “এটি আদালতের বিষয়। আমি কোর্টেই স্বাক্ষ্য দেবো এবং সেখানে সবকিছু স্পষ্ট করবো।”

হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ২৪ জন হলেন— আবুল খায়ের আরাফাত, আবিদ হাসান, রিয়াজ উদ্দিন মোল্লা, মোবাশ্বির রিদম, রক্তিম হাসান, সারোয়ার আহমেদ সাইফ (সাইদ), খালেদ হাসান রুমি, আল সামাদ শান্ত, মাহমুদুল হাসান তমাল, শরিফুল ইসলাম, রুম্মান হোসেন, রাকিবুল হাসান, নাহিদ রাফিন, সাবিক, সাব্বির হোসেন, টিকলী শরিফ, শাহরিয়ার সান, শেখ মোহাম্মদ সাইফ, অশোক আলী, সিতাব খান, ফারদিন খান, মোঃ সওকত হোসেন, ইরাজ রব্বানি ও প্রসেনজিৎ কুমার।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. রাহাত হোসেন ফয়সাল বলেন, “স্বাক্ষীরা নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হওয়ায় মামলা এগোয়নি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের কার্যক্রম কতদূর তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার অনেকদিন পর এই মামলার বিষয়ে জানতে পারি। আমি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, কিন্তু তাদের ধীরগতির কারণে বিষয়টি এগোচ্ছে না। প্রয়োজনে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তবে কেউ এই কমিটিতে থাকতে চায় না। আমাকে সহযোগিতা না করলে একা কিছু করা সম্ভব নয়।”

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...