Logo Logo

বদলি আদেশের ৯০ দিনেও ফেনী ছাড়েনি সওজের কার্যসহকারি কামাল


Splash Image

ফেনী সওজের কার্যসহকারি কামাল উদ্দিন।

ফেনী জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) যেন একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বদলে ব্যক্তিগত খামারে পরিণত হয়েছে—এমনই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে কার্যসহকারী কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে।


বিজ্ঞাপন


বছরের পর বছর প্রভাব, ভয় দেখানো ও তদবিরের রাজনীতির মাধ্যমে তিনি ফেনী সওজকে কার্যত নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন সাম্রাজ্যে রূপান্তর করেছেন বলে স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। সরকারি সম্পদ লুট, অবৈধ অর্থ আদায় এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার নগ্ন অপব্যবহারই যেন ছিল তার প্রধান পরিচয়।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, কামাল উদ্দীন তার নিয়ন্ত্রিত সওজ এলাকা থেকে অবৈধভাবে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন, সওজের রাস্তা কেটে ব্যক্তিগত পাইপলাইন, পানি ও গ্যাসের সংযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ আদায় করেছেন। সহকারী প্রকৌশলী আবদুল বাতেনের সঙ্গে যোগসাজশে মেইনটেন্যান্সের নামে ভূয়া বিল ও ভাউচার তৈরি করে সওজের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, সড়ক বিভাগের জমি ভূয়া ইজারা দেখিয়ে অর্থ আদায়, লালপোল এলাকায় সওজের জমিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় এবং সরকারি ক্রয়ে পরিকল্পিত দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের একাধিক প্রমাণও উঠে এসেছে।

স্থানীয় একাধিক কর্মকর্তা ও ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কামালের প্রভাব ছিল এতটাই শক্তিশালী যে তার বিরুদ্ধে কথা বললে হয়রানি, বদলি বা কাজ বাতিলের ভয় দেখানো হতো। ফলে দীর্ঘদিন ধরে তার অপকর্ম প্রকাশ্যে আসেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সুনির্দিষ্ট দলিল ও তথ্যপ্রমাণ সামনে আসায় অবশেষে বিষয়টি সওজ অধিদপ্তরের নজরে আসে।

এরই প্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট এক লিখিত আদেশে সওজ অধিদপ্তর কামাল উদ্দীনকে ফেনী থেকে বদলি করে অন্যত্র পদায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, সেই আদেশ কার্যকরে বাধা দিতে তিনি ‘টাকার বস্তা’ নিয়ে ঢাকায় ছুটে যান এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রভাব খাটান। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তার স্ট্যান্ড রিলিজ প্রক্রিয়া পরিকল্পিতভাবে আটকে রাখা হয়েছে, ফলে সরকারি আদেশ উপেক্ষা করেও তিনি এখনো স্বপদে বহাল আছেন।

এ বিষয়ে ফেনী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, কামালকে অনেক আগেই বদলি করা হয়েছে, কিন্তু স্ট্যান্ড রিলিজ না হওয়ায় তিনি এখনো দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেন, কাউকে জোর করে কর্মস্থল ত্যাগ করানো তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এ বক্তব্য থেকেই প্রশ্ন উঠছে—তবে কি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনই অসহায়?

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে কামাল উদ্দীন দাবি করেছেন, তিনি যক্ষা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং তার চাকরির মেয়াদ আর মাত্র আড়াই বছর বাকি। তাই এই অবস্থায় ফেনী ছাড়তে চান না। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, এটি কেবল দায়িত্ব এড়ানোর ও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার একটি কৌশল, যাতে করে চলমান অনিয়মের স্রোত অব্যাহত রাখা যায়।

কামালের বদলির খবরে ফেনী সড়ক বিভাগের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকাশ্যে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, তার দাপটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিভাগে স্বচ্ছতা বলতে কিছুই ছিল না। একাধিক কর্মচারীর দাবি, কামাল থাকলে নিয়মের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থই ছিল প্রধান নীতি।

এখন প্রশ্ন হলো—সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্য দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের এত অভিযোগ থাকার পরও কীভাবে একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা বহাল থাকেন? কার ছত্রছায়ায় আটকে রাখা হয়েছে বদলির আদেশ? এবং কবে শুরু হবে প্রকৃত তদন্ত?

সচেতন মহলের জোর দাবি, শুধু বদলিই নয়, কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ফেনী সওজে এই দুর্নীতির সংস্কৃতি আরও গভীরে প্রোথিত হবে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুণ্ঠন চলতেই থাকবে।

প্রতিবেদক- মশি উদ দৌলা রুবেল, ফেনী।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...