বিজ্ঞাপন
তবে প্রশ্ন হলো—এই আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থায় সাধারণ যাত্রীদের অভিজ্ঞতা কেমন? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ব্যবস্থাপনাগত নানা ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনার কারণে যাত্রাপথটি অনেকের জন্য হয়ে উঠছে এক রকম দুর্ভোগের নামান্তর।
১. টিকিট লাইনে ভোগান্তি
মেট্রোরেলে যাত্রীদের অন্যতম বড় দুর্ভোগের জায়গা টিকিট সংগ্রহ। সীমিত সংখ্যক কাউন্টারে প্রতিদিন শত শত যাত্রীকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়, যা এই আধুনিক ব্যবস্থার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
২. ধাক্কাধাক্কি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
স্টেশনে ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি ও বিশৃঙ্খল প্রবেশ। যাত্রীদের দাঁড়িয়ে চলাচল করার সুযোগ থাকায় অতিরিক্ত যাত্রী বগিতে উঠতে চায়, ফলে প্রবীণ, নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
৩. তথ্য ও গাইডেন্সের অভাব
স্টেশনগুলোতে তথ্য সহায়তা বা দিকনির্দেশনা যথেষ্ট নয়। অনেক নতুন যাত্রী স্মার্ট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম, প্ল্যাটফর্ম কোথায়—এসব জানেন না। ফলে বিভ্রান্তি ও অপ্রয়োজনীয় ভিড় সৃষ্টি হয়।
৪. প্রযুক্তি সুবিধার সীমাবদ্ধতা
বিশ্বের আধুনিক মেট্রোরেলগুলোতে অ্যাপ, কিয়স্ক মেশিন ও অনলাইন বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করা যায়। অথচ ঢাকার মেট্রোরেলে এখনো অধিকাংশ যাত্রী হাতে হাতে টিকিট সংগ্রহ করছেন, যা সময়সাপেক্ষ এবং জনদুর্ভোগ বাড়ায়।
সমাধানে প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ
এই সংকট থেকে উত্তরণে কিছু বাস্তবমুখী ও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:
টিকিট ভেন্ডিং মেশিন ও অ্যাপভিত্তিক টিকিটিং সেবা চালু করা
প্রতিটি স্টেশনে তথ্য সহায়ক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ
স্টেশনে প্রবেশ ও বগিতে ওঠার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা
নিরাপত্তা জোরদার এবং লাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি
যাত্রী অভিজ্ঞতা ও মতামত নেওয়ার জন্য হেল্প ডেস্ক ও অভিযোগ বক্স স্থাপন
মেট্রোরেল বাংলাদেশের নগরায়নে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। তবে শুধু প্রযুক্তি নয়, সফলতার মূল চাবিকাঠি ব্যবস্থাপনা ও জনসেবামূলক মানসিকতা। যাত্রীদের সম্মান, সময় ও নিরাপত্তার প্রতি সংবেদনশীল না হলে এই অর্জন অর্থহীন হয়ে পড়বে। উন্নত প্রযুক্তির পাশাপাশি দরকার উন্নত মনোভাব ও দক্ষ নেতৃত্ব।
-এ কে আজাদ, ঢাকা
