বিজ্ঞাপন
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটের কারণে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, “অপুষ্টি বা অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণে মৃতদের মধ্যে এই নবজাতকও রয়েছে। এদিন অন্তত আরও দুজন অনাহারে মারা যান আমাদের হাসপাতালে।”
এদিকে, ইসরায়েলের অব্যাহত সামরিক হামলায় শনিবার (১৯ জুলাই) ভোর থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে আরও ১১৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ইসরায়েলের মানবিক সহায়তা বন্ধ এবং বিতর্কিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি চালানোর মধ্যেই গাজায় আবারও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, গাজার হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগগুলো খাবারের অভাবে কাতর হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ছে। বর্তমানে অন্তত ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, শনিবারের হামলা চালানো হয়েছে গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং রাফাহের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। তারা এই হামলার জন্য সরাসরি ইসরায়েলি বাহিনীকে দায়ী করেছে।
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-খালিদি বলেন, “তারা ইচ্ছা করে গুলি চালিয়েছে। একদিকে জিপ আর অন্যদিকে ট্যাংক আসতে দেখে আমরা পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা গুলি শুরু করে।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-বারবারি বলেন, “এই কেন্দ্রগুলো আসলে মৃত্যু ফাঁদ। মানুষ শুধু একটু খাবারের আশায় আসে, কিন্তু ফিরে যায় লাশ হয়ে।”
অবস্থার ভয়াবহতা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশনের মহাসচিব জগন চাপাগাইন বলেন, “গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। কাউকে যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক মুঠো খাবার সংগ্রহ করতে না হয়।”
গাজার বাজারগুলোতে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ নেই। খাদ্যদ্রব্যের দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে ২৩ লাখ মানুষের পক্ষে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেল্যান্ড বলেন, “গত ১৪২ দিনে আমরা একটি ট্রাকও গাজায় প্রবেশ করাতে পারিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে নেতা বলছেন সহায়তা প্রবাহ স্বাভাবিক হচ্ছে, তা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।”
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, তারা মিসরের সীমান্তে গাজার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী মজুত রেখেছে। তবে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো এখনও প্রবেশ করাতে পারেনি। সংস্থাটি আহ্বান জানিয়েছে, “সীমান্ত খুলুন, অবরোধ তুলে নিন এবং আমাদের কাজ করতে দিন।”
এই মানবিক সংকট ও ক্রমবর্ধমান প্রাণহানির প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি গাজাবাসীর জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।