Logo Logo

ইসলামি চিন্তা থেকে বামপন্থী: বদরুদ্দীন উমরের জীবনযাত্রার গল্প

ইসলামি চিন্তাধারায় বেড়ে ওঠা বদরুদ্দীন উমর কীভাবে বামপন্থী দর্শনের দিকে অগ্রসর হলেন?


Splash Image

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, লেখক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার শ্যামলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


গত দুই মাসে দুইবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হলেও শেষ পর্যন্ত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয়নি।

২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে তিনি সক্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বদরুদ্দীন উমরের জন্ম ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক এবং মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ১৯৫০ সালে পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। বাবার প্রভাবে শুরুর দিকে ইসলামি চিন্তায় অনুপ্রাণিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে। তমুদ্দিন মজলিসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও পরবর্তীতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার।

১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক এবং ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। অক্সফোর্ডে থাকাকালীন আন্তর্জাতিক বামপন্থী চিন্তাবিদদের সঙ্গে পরিচয় ও গবেষণার মাধ্যমে তার মার্কসবাদী দর্শন পূর্ণতা পায়। দেশে ফিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ১৯৬৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে পূর্ণকালীন রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট ও কৃষক ফেডারেশনের নেতৃত্ব দেন।

তার লেখনী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সংস্কৃতি ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। বিশেষ করে তিন খণ্ডের গ্রন্থ পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এছাড়া সাংস্কৃতিক সংকট, সাম্প্রদায়িকতা এবং সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা বইগুলোও পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত।

সাংবাদিক মহিউদ্দীন আহমদ বলেন, বদরুদ্দীন উমর ছিলেন “অর্গানিক ইন্টেলেকচুয়াল”। অর্থাৎ তিনি শুধু বুদ্ধিজীবী নন, বরং গণআন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। একইসঙ্গে তার ভূমিকা ছিল মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে।

১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত হলেও তিনি নীতিগত কারণে তা গ্রহণ করেননি। চলতি বছর স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও একই কারণে তা প্রত্যাখ্যান করেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন নীতিনিষ্ঠ এবং আপসহীন।

তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল এক প্রজ্ঞাবান চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদকে, যিনি ইসলামি ভাবধারা থেকে মার্কসবাদী দর্শনের দিকে যাত্রা করে দেশের বামপন্থী রাজনীতিতে নতুন আলো জ্বালিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...