Logo Logo

বিবিসির প্রতিবেদন

বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কার পর এবার নেপাল নিয়ে মোদির কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ


Splash Image

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের জেরে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়ে দেশজুড়ে ভয়াবহ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। ভারতের কৌশলগত প্রতিবেশী এই হিমালয়ি রাষ্ট্রের অস্থিরতা নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছে দিল্লি।


বিজ্ঞাপন


ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংস আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটা তৃতীয় দেশ হলো নেপাল। ওলির পদত্যাগকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ দিল্লি সফরের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে কারফিউ এবং সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালিয়েছে ও কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিকের বাড়িতে আগুন দিয়েছে।

কাঠমান্ডুর এই দৃশ্য অনেকের কাছে গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার জনঅভ্যুত্থানের সময়কার সহিংসতার স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে (টুইটার) প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “নেপালের সহিংসতা হৃদয়বিদারক। এত তরুণ প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত। নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।”

এ ঘটনার পর মঙ্গলবার তিনি মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের নিয়ে জরুরি বৈঠকও করেন।

ভারত নেপালের সঙ্গে ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ উন্মুক্ত সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে, যা মূলত উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। দেশটিতে প্রায় ৩৫ লাখ নেপালি নাগরিক কাজ করেন বা বসবাস করেন। ভিসা ছাড়াই নেপালি নাগরিকরা ভারতে যাতায়াত ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পান। এছাড়া প্রায় ৩২ হাজার গুর্খা সেনা চুক্তির আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন।

ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালের ভৌগোলিক অবস্থান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড নেপালের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থান করছে। ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে প্রবেশের পথও সরাসরি নেপালের ভেতর দিয়ে গেছে। ফলে কাঠমান্ডুর রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের নিরাপত্তার জন্যও উদ্বেগজনক।

নেপাল ভারতের জন্য অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির সঙ্গে ভারতের বার্ষিক বাণিজ্য ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যার অধিকাংশই তেল ও খাদ্যপণ্য আমদানিনির্ভর। পাশাপাশি, হাজারো ভারতীয় ভক্ত প্রতিবছর নেপালের মন্দিরে তীর্থযাত্রায় যান।

বর্তমানে বিক্ষোভকারীরা নেপালের তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই ক্ষুব্ধ—ওলির নেতৃত্বাধীন সিপিএন–ইউএমএল, শের বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেস এবং পুষ্পকমল দাহাল প্রচণ্ডর নেতৃত্বাধীন সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র)। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়ায় ভারত অত্যন্ত সতর্ক থাকবে।

২০১৯ সালে ভারতের নতুন মানচিত্রে বিতর্কিত সীমান্ত অন্তর্ভুক্ত করায় নেপালের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়। পরে নেপালও পাল্টা মানচিত্র প্রকাশ করে। সম্প্রতি ওই সীমান্ত দিয়ে ভারত-চীন বাণিজ্য চালু হওয়ায় ওলি প্রকাশ্যে চীনা নেতৃত্বের কাছে আপত্তি জানিয়েছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শ্রীলঙ্কার মতো নেপালের পরিস্থিতিও ভারতকে অপ্রস্তুত করেছে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) কার্যত অচল হয়ে থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর অস্থিরতা মোকাবিলায় ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতা মন্তব্য করেন, “ভারত তার বৃহৎ শক্তি হওয়ার স্বপ্নে মগ্ন, কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আগে নিজের প্রতিবেশে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...