বিজয়ের মুহূর্তেও বিনয়ী ছিলেন নবীজি (সা.)
বিজ্ঞাপন
হিজরির অষ্টম বছর রমজান মাসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রায় দশ হাজার সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে মক্কার উপকণ্ঠে প্রবেশ করেন। দীর্ঘ নির্যাতন ও নির্বাসনের পর মুসলমানরা যখন শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে, তখন প্রতিশোধের ঢেউ ওঠার কথা ছিল, কিন্তু ঘটল তার উল্টো। নবীজি (সা.) ঘোষণা দিলেন—“আজ প্রতিশোধের দিন নয়, আজ দয়া ও ক্ষমার দিন।”
মুসলিম সেনারা চারদিক থেকে মক্কায় প্রবেশ করলেও কোনো সংঘর্ষ হয়নি। নবীজি (সা.) নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন মক্কার লোকেরা প্রতিরোধের সুযোগ না পায়। এতে শহর দখল হলেও রক্তপাত ঘটেনি। মক্কাবাসী বিস্ময়ে দেখল, যারা একসময় নির্যাতিত ছিল, তারা আজ বিজয়ী হয়েও দয়া ও শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে।
বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সা.) বিনয় ও কৃতজ্ঞতায় এতটা নত হয়ে ছিলেন যে, তার দাড়ি হাওদার কাঠে লেগে যাচ্ছিল। তিনি সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করতে করতে মক্কায় প্রবেশ করেন এবং আল্লাহর সাহায্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শহরে প্রবেশের পর নবীজি (সা.) কাবাঘরে গিয়ে তাওয়াফ করেন। সে সময় কাবার ভেতরে ছিল ৩৬০টি মূর্তি। নবীজি হাতে ধনুক নিয়ে একে একে সেগুলো ভেঙে ফেলেন এবং কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন—“বলো, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।” (সুরা ইসরা: ৮১)
এরপর নবীজি ঘোষণা করেন, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, তোমরা সবাই মুক্ত।” এ ঘোষণায় ইসলামবিদ্বেষী অনেকেই নিরাপত্তা পান এবং পরবর্তীতে ইসলামে দলে দলে যোগ দেন।
মক্কা বিজয় মানবতার ইতিহাসে একটি অনন্য শিক্ষা হয়ে আছে। এ থেকে আমরা পাই—
১. ক্ষমা ও উদারতা: প্রকৃত বিজয় প্রতিশোধে নয়, ক্ষমার মধ্যেই নিহিত।
২. শান্তিপূর্ণ পরিবর্তন: রক্তপাত ছাড়াই একটি শহর বদলে দেওয়া যায়।
৩. বিনয়ী নেতৃত্ব: বিজয়ের মুহূর্তেও নবীজি ছিলেন বিনম্র।
৪. নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার: তিনি সবার অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।
৫. নীতি ও আদর্শে অটল থাকা: ত্যাগ-সংগ্রামের পরও তিনি ন্যায়ের পথ ছাড়েননি।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...