বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার (১২ নভেম্বর) রাতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি—পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে—বিলটি পাস হয়। এর আগে সোমবার (১০ নভেম্বর) উচ্চকক্ষ সিনেটেও বিলটি অনুমোদন পায়। এখন এটি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে, যার পর এটি সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।
এই সংশোধনীর সবচেয়ে বড় উপকারভোগী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন দেশটির সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের ডি-ফ্যাক্টো শাসক হিসেবে পরিচিত।
সংশোধনীর মাধ্যমে মুনিরকে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ নামে নতুন একটি পদে উন্নীত করা হবে, যা তাঁকে সেনাবাহিনী ছাড়াও নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ওপর সর্বময় কর্তৃত্ব দেবে। পাশাপাশি তাঁকে দেওয়া হবে আজীবন ফৌজদারি বিচারের হাত থেকে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজাঙ্কট অধ্যাপক ও সামরিক রাজনীতি বিশ্লেষক আকিল শাহ বলেন, “আসিম মুনির সাংবিধানিকভাবে অভূতপূর্ব এক সুরক্ষিত পদ সৃষ্টি করেছেন, যা ভবিষ্যতের সেনাপ্রধানদেরও স্থায়ীভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে রাখবে। এটি নাগরিক কর্তৃত্বের নীতিকে উপহাসে পরিণত করেছে।”
এই সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যপরিধিও ব্যাপকভাবে সীমিত করেছে। নতুন আইনে সুপ্রিম কোর্টের ঊর্ধ্বে একটি ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার বিচারপতিদের মনোনয়ন দেবে নির্বাহী বিভাগ।
এছাড়া বিচারপতিদের বদলি ও স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত এখন থেকে এককভাবে প্রেসিডেন্টের হাতে থাকবে—যা কার্যত বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।
সাংবিধানিক আইনজীবী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই সংশোধনী পাকিস্তানের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ধারণাটিকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশটি কার্যত আজীবন একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটছে।”
বৃহত্তম বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই ভোট বর্জন করেছে। দলের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি। বহুদলীয় বিরোধী জোট তেহরিক-ই-তাহাফুজ-ই-আইন-ই-পাকিস্তান (টিটিএপি) অভিযোগ করেছে, সরকার সংবিধানের ভিত্তি নড়িয়ে দিয়েছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে শতাধিক আইনজীবী ও অধিকারকর্মী এই প্রক্রিয়াকে ‘সংবিধান বিকৃতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের ভাষায়, “এটি পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর শেষ পেরেক ঠুকে দিল।”
অতীতে সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে সপ্তাহজুড়ে বিতর্ক হতো। কিন্তু এবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই কক্ষেই বিলটি পাস হয়। বুধবারের অধিবেশনে মাত্র চারজন সংসদ সদস্য বিলটির বিরোধিতা করেন।
সরকারি জোটের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা দাবি করেছেন, এই সংশোধনী “ন্যায়বিচার ও সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি”র জন্য প্রণীত হয়েছে।
২০২২ সালে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আসিম মুনির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কার্যত রাষ্ট্রপ্রধানের মতোই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তিনি একাধিক বিদেশ সফরে গিয়েছেন এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ২৭তম সংশোধনী কার্যকর হলে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক শাসনের নতুন যুগে প্রবেশ করবে—যেখানে নাগরিক সরকারের অবস্থান হবে প্রতীকী, আর সমস্ত প্রকৃত ক্ষমতা থাকবে সেনাবাহিনীর হাতে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...