বিজ্ঞাপন
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালের সামনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যদের টহল ও অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। পুরো এলাকা কড়া নিরাপত্তায় মোড়ানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের চারদিকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং মাজার গেটের সামনে সেনাবাহিনীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। ট্রাইব্যুনালের প্রবেশমুখ, ভেতর ও আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘন টহল দিচ্ছে।
আজ ঘোষিত হতে যাওয়া এই রায়কে কেন্দ্র করে শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরও এই মামলার দিকে। বিশেষ করে ‘চব্বিশের জুলাই গণহত্যা’ মামলার এ রায় আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থায় একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় রায় ঘোষণার মুহূর্ত সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষও আদালতের এ গুরুত্বপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতে পারেন। পাশাপাশি সরকারিভাবে এই বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হবে, ফলে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ এ রায় দেখতে পারবেন।
প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনা। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা রয়েছে, যার মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদ তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। মোট ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। চলতি বছরের ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে ৮ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জবানবন্দি ও জেরা নেওয়ার মধ্য দিয়ে এ ধাপ শেষ হয়।
গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা। গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিচারের উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। পরে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীরা পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন।
এই মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। তার বিষয়ে প্রসিকিউশন সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিলেও তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ খালাসের আবেদন করেছেন। ফলে রায় ঘোষণার মাধ্যমে জানা যাবে মামুন মুক্তি পাচ্ছেন নাকি অন্য কোনো সিদ্ধান্ত আসছে।
মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ, জবানবন্দি, যুক্তিতর্ক ও দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হবে। ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টদের মতে, এই রায় শুধু তিন ব্যক্তির শাস্তি-অশাস্তির রায় নয়; বরং এটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ মোকাবিলার একটি নতুন উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেবে। আজকের রায়ের অপেক্ষায় পুরো জাতি এবং বিশ্বের বহু দেশের নজর এখন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...