Logo Logo

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর


Splash Image

সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়কে অবৈধ ঘোষণা করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ এ ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন— বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

রায় ঘোষণার সময় আইনজীবী, সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের উপচে পড়া উপস্থিতিতে এজলাসকক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরে এলেও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে। চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে পূর্ণমাত্রায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর হবে। প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত দেন।

গত ১১ নভেম্বর টানা শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২০ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২, ৪, ৫, ৬, ১১ নভেম্বর এবং ২২, ২৩, ২৮, ২৯ অক্টোবর টানা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ ও ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত ত্রয়োদশ সংশোধনী মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন।

২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট রিট খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে আপিল দায়ের করা হলে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পাস হয় পঞ্চদশ সংশোধনী, যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপ করা হয় এবং ২০১১ সালের ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশ করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি— তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া এবং জাহরা রহমান।

১৬ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথকভাবে আবেদন করেন।

এ ছাড়া গত বছর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং নওগাঁর রানীনগরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেনও রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।

সমস্ত শুনানি, বিতর্ক ও আইনি যাত্রা অতিক্রম করে আজ ঘোষিত এ রায় দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...