বিজ্ঞাপন
ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ঘিরে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান ভলোদিমির জেলেনস্কি মন্তব্য করেছেন, এই পরিকল্পনা দেশকে ‘মহাসংকটে’ ফেলেছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব সংঘাত সমাধানের একটি ভিত্তি হতে পারে। তবে কিয়েভ যদি তা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে রুশ বাহিনীর সামরিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ফক্স নিউজ রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তার মতে ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাব গ্রহণের ‘উপযুক্ত সময়’ আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এর আগে দুটি সূত্র রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল।
পরে এএফপি জানায়, নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকের সময় সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, জেলেনস্কিকে এই প্রস্তাব “পছন্দ করতেই হবে।”
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাব গ্রহণ না করলে ইউক্রেনের সামনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত ‘২৮ দফার শান্তিচুক্তি’ অনুযায়ী, ইউক্রেনকে পূর্বাঞ্চলের দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই অঞ্চলের কিছু অংশও মস্কোর ছাড়পত্র নিয়ে পরিচালনার শর্ত রাখা হয়েছে। বিনিময়ে রাশিয়া দখলকৃত ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল ফিরিয়ে দেবে বলে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবের বড় দুটি ধারা হলো—ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী সংকুচিত করে ছয় লাখে নামানো এবং ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য না করার নিশ্চয়তা।
কিয়েভে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন ইতিহাসের এক কঠিন সময় পার করছে এবং আন্তর্জাতিক চাপ এখন যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। তার ভাষায়, দেশটি এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে হয় সম্মান হারাতে হবে, নতুবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারকে হারানোর ঝুঁকি নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবে অন্তত দুটি বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না—ইউক্রেনের সম্মান ও স্বাধীনতা। যদিও এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে তিনি প্রস্তুত।
অন্যদিকে, মস্কো থেকে দেয়া বক্তব্যে পুতিন বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই এবং এই প্রস্তাবকে ‘চূড়ান্ত সমঝোতার ভিত্তি’ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে কিয়েভ আলোচনায় না এলে এবং প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে তিনি সতর্ক করেন। তার ইঙ্গিত ছিল সাম্প্রতিক সময়ে রুশ বাহিনীর হাতে কুপিয়ানস্ক শহর দখলের ঘটনার পুনরাবৃত্তির দিকে।
পুতিন আরও জানান, গত আগস্টে আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠকের আগেই মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে এই শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে রাশিয়া কিছু ছাড়ও দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে তিনি বলেন, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে কূটনৈতিক ও সামরিক—উভয় কৌশল প্রয়োগে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া।
বর্তমানে কিয়েভ কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং ইউক্রেনীয় সরকারের চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া কবে আসবে—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জেলেনস্কির বক্তব্য, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ এবং পুতিনের সতর্কবার্তা—সব মিলিয়ে দনবাসের নিয়ন্ত্রণ, সামরিক সক্ষমতা এবং ন্যাটো-নিরপেক্ষতা নিয়ে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...