‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনে’র একটি পর্বে বক্তব্য দিচ্ছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। ছবি : সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর আয়োজনে ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’-এর একটি পর্বে একক বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ‘যুদ্ধ, ভঙ্গুর রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার সমাপ্তি’ এবং ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভুয়া তথ্যের হুমকি’ শীর্ষক আলোচনায় নিজের মতামত তুলে ধরেন মাহ্ফুজ আনাম।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, তথ্যপ্রবাহের গণতন্ত্রীকরণ নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক, কারণ এখন প্রত্যেকে নিজের মত প্রকাশ করতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো, এসব মতামতের বড় অংশই তথ্যভিত্তিক নয়, যুক্তিনির্ভর নয় এবং জ্ঞানসম্মতও নয়। বরং যত বেশি ঘৃণাপূর্ণ মন্তব্য, তথ্য-বিচ্যুতি ও উসকানিমূলক লেখা ছড়ানো হয়, তত বেশি ক্লিক আসে এবং তত বেশি আয় হয়—এভাবেই মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ ও অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর জন্য বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। তাঁর মতে, বিশ্ব বাণিজ্যের চলমান টানাপোড়েন ও বাণিজ্য যুদ্ধ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভবিষ্যতের বিশ্ব আরও বেশি নাটকীয় ও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। তাই দেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাস্তবতা গভীরভাবে অনুধাবন করা জরুরি।
বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে জ্ঞান ও দক্ষতার গুরুত্ব তুলে ধরে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, অর্থ বা সামরিক শক্তির দিক থেকে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগোতে পারব না; আমাদের একমাত্র শক্তি হতে পারে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা পপুলিজমের যুগে এক বিপজ্জনক বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং গবেষণায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করছি না।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন কোনো সরকারের আমলেই বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হচ্ছে না। একই সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার মান নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দেওয়ায় দেশ নিজেই নিজের ক্ষতি করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে চীনের শিক্ষা ও গবেষণায় বিপুল বিনিয়োগের প্রসঙ্গ টেনে আনেন এই সম্পাদক।
মাহ্ফুজ আনামের মতে, বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেনি জ্ঞানের প্রকৃত গুরুত্ব এবং জাতীয় ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এর ভূমিকা কতটা গভীর। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও আন্তর্জাতিক মানে প্রতিযোগিতামূলক নয়। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান তুলনামূলক ভালো, তবুও গবেষণা খাতে বিনিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়ে গেছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিকে গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ‘মানসিক উপনিবেশবাদের’ শিকার হতে পারে। তাই এখনই সময় গবেষণা, শিক্ষা ও জ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...