বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগের তীর উঠেছে পাটগ্রাম জোংড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা চিনু বালা রায় ও আয়া রত্না রাণীর বিরুদ্ধে।
নিহত ঝর্ণা রাণী নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার চাপানি গ্রামের রাম দয়াল রায়ের মেয়ে। প্রায় ১০ বছর আগে তার বিয়ে হয় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের নিরঞ্জন রায়ের (৩৫) সঙ্গে। তাদের একটি ৮ বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে। ঈদের পরদিন গত ৮ জুন দুপুর ১২টার দিকে প্রসবজনিত কারণে ঝর্ণা রাণী ভর্তি হন স্থানীয় জোংড়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
স্বামী নিরঞ্জন জানান, বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারেন গর্ভের শিশুর অবস্থা ভালো। তাই মন থেকে দুশ্চিন্তা দূর হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পর শুরু হয় অব্যবস্থাপনার নাটক। আয়া রত্না রাণী জানান, স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হবে। পরে খবর দেওয়া হয় পরিদর্শিকা চিনু বালাকে। তিনি ২ ঘণ্টা পর এসে ইনজেকশন ও ওষুধ দেন, যদিও তখনো প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়নি। ওষুধ প্রয়োগের ফলে বিকেল ৫টার দিকে ঝর্ণা একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন।
সন্তান জন্মের পর প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও পরিদর্শিকা ও আয়া বিষয়টি গোপন রাখেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর তারা জানান, প্রসূতির বমি ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এরপর রোগীর পরিবারকে রাত ১২টার দিকে জানানো হয় দ্রুত পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতে হবে। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত রংপুরে রেফার করেন।
রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে দুইদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১০ জুন মৃত্যুবরণ করেন ঝর্ণা রাণী। তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে স্বামী ও দুই সন্তানসহ পুরো পরিবার।
স্বামী নিরঞ্জন অভিযোগ করে বলেন, “আমার স্ত্রীর অবস্থা শুরু থেকেই ভালো ছিল। বারবার অনুরোধ করেছিলাম সমস্যা হলে আমাদের জানাতে। কিন্তু তারা টালবাহানা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারা আমার স্ত্রীর জীবন নিয়ে খেলেছে। রংপুরে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রসবের সময় নার ছিঁড়ে গেছে, ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও বমি বন্ধ করা যায়নি।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত আয়া রত্না রাণী বলেন, “বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে জন্মেছে। পরে বমি হলে ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু প্রসূতির আগের শারীরিক সমস্যার বিষয়টি আমাদের জানাননি তার পরিবার।”
পরিদর্শিকা চিনু বালা রায়ের ভাষ্য, “উপজেলা চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। কোনো গাফিলতি হয়নি, জোর করে প্রসবও করানো হয়নি।”
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা মেডিকেল অফিসার ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. খুরশিদুল ইসলাম বলেন, “প্রসূতির মৃত্যুর খবর জেনেছি। গাফিলতির অভিযোগ সত্য কি না তা তদন্তসাপেক্ষ। আমি ছুটিতে আছি, ফিরে এসে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হবে।”
বর্তমানে তিনদিনের নবজাতক ও ৮ বছরের কন্যাসন্তানকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন নিরঞ্জন রায়। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...